পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৩ মে, ২০১২

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ আর নেই


বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ আর নেই। ২২ মে, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)৭৬ বছর বয়স হয়েছিলো তার।
শুধু অর্থনীতিবিদই নন বরং তিনি ছিলেন শিক্ষক ও গবেষকঅর্থনীতি ছাড়াও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছিল তাঁর কাজের বিষয়। পরিবেশ আন্দোলন, মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর। করতেন সামাজিক সংগঠন। রাজনীতিবিদদের কাছে সমালোচিত-নিন্দিত হলেও অধ্যাপক মোজাফ্ফর লক্ষচ্যুত হননি কখনও। ব্যাক্তিগত জীবনে ও নির্লোভ এই ব্যক্তি ধরে রেখেছেন তার সুনাম্।
‍জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোজাফ্ফর আহমদ বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়রাত ১১টা ২২ মিনিটে চিকিসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে জানান, হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে‌।
তাঁর স্ত্রী অধ্যাপিকা রওশন জাহান জানান, সারা দিন মোজাফ্ফর আহমদ সুস্থ ছিলেনরাতে নামাজ পড়ে নিজেই নেবুলাইজার নেন। পরে পাশের রুম থেকে এসে দেখেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর পড়ে যাচ্ছেনতাঁকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর চিকিসকের সঙ্গে কথা বলে তখনই তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।
তার বড় ছেলে সিরাজুল আমিন জানান, গাড়িতে ওঠার সময়ও তিনি কথা বলছিলেন। ‘কষ্ট হচ্ছে, হাসপাতালে যাব’ এমন কথাও বলেছেন তিনি।
মৃত্যুর পরপর তাঁকে বারডেমের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়রাতে মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরে শোকের ছায়া নেমে আসেশুধু আত্মীয়স্বজন নয় শুভানুধ্যায়ী ও সহকর্মীরা বারডেমে যান।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর এর কর্
জীবন ছিলো বৈচিত্রময়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। সেই প্রতিষ্ঠানের সহকর্রা আসেন তাকে শেষ দেখা দেখতে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এই গুনি মানুষটি। সুজনের নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বমন পণ্ডিত ব্যক্তির শূন্যস্থান পূরণীয় নয়

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চবাবার নাজির আহমেদ এবং মা জাহানারা বেগম১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন১৯৫৫ সালে অনার্স এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স করেন পিএইচডি করেন ১৯৬৫তে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেঅর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বব লুকাস তাঁর সহপাঠী ছিলেনআটজন শিক্ষক পেয়েছিলেন, যাঁরা ছিলেন নোবেল বিজয়ী
হরগঙ্গা কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু এরপর পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আনিসুর রহমান, রেহমান সোবহান ও শেখ মকছুদ আলীপিএইচডি শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগদান করলেও কিছুদিন পর পদত্যাগ করেনএরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেনযোগ দেন ইপিআইডিসিতে১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেনএরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবেদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে অবসরে যান। এ ছাড়া কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে
তাঁর একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে
সংগ্রহ ও সম্পাদনা: পান্থ রহমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন