বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ আর নেই। ২২ মে, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। ৭৬ বছর বয়স হয়েছিলো তার।
শুধু অর্থনীতিবিদই নন বরং তিনি ছিলেন শিক্ষক ও গবেষক। অর্থনীতি ছাড়াও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ছিল তাঁর
কাজের বিষয়। পরিবেশ আন্দোলন,
মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর।
করতেন সামাজিক সংগঠন। রাজনীতিবিদদের কাছে সমালোচিত-নিন্দিত হলেও অধ্যাপক
মোজাফ্ফর লক্ষচ্যুত হননি কখনও। ব্যাক্তিগত জীবনে সৎ ও নির্লোভ এই ব্যক্তি ধরে রেখেছেন তার সুনাম্।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোজাফ্ফর আহমদ বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া
হয়। রাত ১১টা ২২ মিনিটে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে জানান, হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
তাঁর স্ত্রী অধ্যাপিকা রওশন জাহান জানান, সারা দিনই মোজাফ্ফর আহমদ সুস্থ ছিলেন। রাতে নামাজ পড়ে নিজেই নেবুলাইজার নেন। পরে পাশের রুম থেকে এসে দেখেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর পড়ে যাচ্ছেন। তাঁকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তখনই তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মারা যান।
তার বড় ছেলে সিরাজুল আমিন জানান,
গাড়িতে ওঠার সময়ও তিনি কথা বলছিলেন।
‘কষ্ট হচ্ছে, হাসপাতালে যাব’ এমন কথাও বলেছেন তিনি।
মৃত্যুর পরপর তাঁকে বারডেমের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সর্বস্তরে
শোকের ছায়া নেমে আসে। শুধু আত্মীয়স্বজন নয় শুভানুধ্যায়ী ও সহকর্মীরা
বারডেমে যান।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর এর কর্
জীবন ছিলো বৈচিত্রময়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। সেই প্রতিষ্ঠানের সহকর্বরা আসেন তাকে শেষ দেখা দেখতে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন এই গুনি
মানুষটি। সুজনের নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার বলেন,
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। এমন পণ্ডিত ব্যক্তির শূন্যস্থান পূরণীয় নয়।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৭ মার্চ। বাবার নাজির আহমেদ এবং মা জাহানারা বেগম। ১৯৫০ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং
১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে
ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে অনার্স এবং ১৯৫৬
সালে মাস্টার্স করেন। পিএইচডি করেন ১৯৬৫তে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী
বব লুকাস তাঁর সহপাঠী ছিলেন। আটজন শিক্ষক পেয়েছিলেন,
যাঁরা ছিলেন নোবেল বিজয়ী।
হরগঙ্গা কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। এরপর পিএইচডি করতে যাওয়ার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ
দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আনিসুর রহমান, রেহমান সোবহান ও শেখ
মকছুদ আলী। পিএইচডি শেষ করে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যোগদান করলেও কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন। এরপর কিছুদিন করাচিতে ইউনাইটেড ব্যাংকে কাজ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। যোগ দেন ইপিআইডিসিতে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২
সালে পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে
পরিকল্পনা কমিশন ছেড়ে দেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগদান করেন অধ্যাপক হিসেবে। দীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অধ্যাপনা করে ২০০৪ সালে অবসরে যান। এ ছাড়া কাজ করেছেন ইউনেসকোসহ একাধিক
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে।
তাঁর একাধিক বই ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা: পান্থ রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন