পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১২

বাংলাদেশ ও নেপালের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

উপ-আঞ্চলিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে ঐক্যমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল। ভারতকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুতই ত্রিপক্ষীয় একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস। নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে দুই পররাষ্ট্র সচিব এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের হলেও; ছিলো না আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম। এবারে ‘পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়’-এ নিয়মিত বৈঠকের ঘোষণা দিয়ে সেই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলো বাংলাদেশ আর নেপাল। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব নিজেদের মধ্যে বৈঠকে সই করলেন কূটনৈতিক সম্পর্কের এই সমঝোতা স্মারকে। পূর্ণ হলো আনুষ্ঠানিকতা। এখন এই প্ল্যাটফর্মের আওতায় আলোচনা হবে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে এখন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হলো। যেই প্ল্যাটফর্মের আওতায় বাংলাদেশ ও নেপাল এর পররাষ্ট্র সচিবরা নিয়মিত বৈঠক করবেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।”

সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন, যোগাযোগ ছাড়াও আলোচিত হয়েছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ইস্যুটি। সচিবরা জানিয়েছেন; জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় বৈঠকে হবে ওয়াকিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক।

নেপালের পররাষ্ট্র সচিব দূর্গা প্রসাব ভট্টরাই জানিয়েছেন; নেপাল এই বৈঠকে বাংলাদেশের কাছে ট্রানজিট বা যাতায়াত সেবা চেয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের করিডর ব্যবহার করা এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার আগ্রহ দেখিয়েছে।

মিজারুল কায়েস বলেন; বাংলাদেশও তাদের জন্য ট্রানজিট দিতে চায়। তাছাড়া মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বাড়াতে নেপালকে সুযোগ দিতে চায়।

“ভারতকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ও নেপাল একটি ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং কমিটি করবে। সেই কমিটি জলবিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানাবে। তারপরই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হবে। তবে আপাতত এখনও কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়।”

বৈঠকে নেপালের পক্ষ থেকে আবারও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবাহারের আগ্রহ দেখানো হয়েছে। তাছাড়া দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে; ট্রানজিট এবং রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই সচিব।
পান্থ রহমান, ঢাকা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখে ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাংলাদেশ ইতিবাচক


৩১ জুলাই; ঢাকা:
ধর্ম, ধর্মে বিশ্বাস, ধর্ম পালনে স্বাধীনতা, শ্রদ্ধা অন্তর্ভুক্তি এবং সহনশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে সরকার যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে তারও প্রশংসা করেছে তারা
ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আন্তর্জাতিক রেটিং তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রদেশটি এ বিষয়ে তাদের ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবারসেই প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে; ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তি ধরে রাখতে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে

বাংলাদেশ সরকার তার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য নিয়োগ দিয়ে এবং তাদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে

আগের বছর কোন ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের কোন সংবাদ আছে কিনা এমন প্রশ্নের নিজেরাই উত্তর খোঁজা হয়েছে ওই প্রতিবেদনটিতে সেখানে বলা হয়েছে; ‘এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায়নিকোথাও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন বিবাদ পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে

জাতীয় সংসদে সম্প্রতি খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন ২০১১ পাস করে সেখানে তহবিলের পরিমাণ এক কোটি থেকে চার কোটি টাকা করেছে বলেও প্রশংসা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনেপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে; বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে তহবিলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছেসেখানে তিন কোটি থেকে পাঁচ কোটি  করা হয়েছে

ফতোয়া নিষিদ্ধ করে সুপ্রিম কোর্টে রুল জারী, নারী অধিকার রক্ষায় উত্তরাধিকার আইনে সমতা আনা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে শান্তি স্থাপনে সরকারের উদ্যোগগুলো ইতিবাচক বলে তার ভূয়ষী প্রশংসা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে

সব কিছুর পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদনে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ঠেকানোয় আরও উদ্যোগী হওয়া উচিতবলা হয়; “ওই দেশটির ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় নীতি র্ধর্মীয় স্বাধীনতাকে রক্ষা করে যা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক উপাদান

উল্লেখ করা যেতে পারে; ধর্মীয় এই বিষয়গুলো নিয়ে যে সকল ফোরামে আলোচনা হয় বাংলাদেশ সরকার সেই ফোরামগুলোতে সই করেছেযেমন; ১৯৪৮ সালের ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অন হিউম্যান রাইটসবা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইট্সবা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশ সই করেছে
পান্থ রহমান, ঢাকা
’ ‘‘

কুমিল্লায় আরও গ্যাসের সন্ধান

৩১ জুলাই; ঢাকা:
মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের ব্যবধানে আরও নতুন গ্যাসক্ষেত্রে সন্ধান মিলিছে বাংলাদেশের কুমিল্লায়। আগেরবার জেলার মুরাদনগর থানার শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়া গিয়েছিলো; এবারও ওই একই এলাকায় মিললো দ্বিতীয় ক্ষেত্র। দুই নম্বর অনুসন্ধান কূপে পাওয়া গেলো এই গ্যাসের স্তরটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে; তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড কিংবা বাপেক্স।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক সাংবাদিকদের বলেছেন, গত ১৩ জুলাই দুই নম্বর কূপের যে স্তরটি গ্যাসপূণৃ ছিলো এবারে ওপরের অংশে পাওয়া গেছে নতুন ক্ষেত্র। বিষয়টি সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ড্রিলিং স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে। যদিও গ্যাসের মজুদ নিয়ে এখনও নিশ্চিত করার মতো কিছু বলতে পারেননি মর্তুজা ফারুক।

নতুন গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের কিংবা পেট্রোবাংলার  চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বলেছেন, নিন্মস্তরের গ্যাসজোনটি ২৬ মিটার পুরু ছিলো তবে এবারে পাওয়া নতুন জোনের পুরুত্ব ৪৮ মিটার। তিনি জানিয়েছেন; “নতুন ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ ৭৬০ পিএসআই কিংবা প্রেসার পার স্কয়ার ইঞ্চি মাপা হয়েছে। ফলে দৈনিক ১৭ মিলিয়ন ঘণফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে।” তিনি জানান; ‘শ্রীকাইল তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন’ প্রকল্প সম্পন্ন করতে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৮১ কোটি ১২ লাখ টাকা।’

বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হলে দেশে চালু কূপের সংখ্যা দাড়াবে ৮২টিতে। আর সেই গ্যাস শিল্প, সার ও বিদ্যুৎ কারখানাগুলোতে সর্বরাহের ঘোষণা দিয়েছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে দেশে দৈনিক দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও উৎপাদিত হচ্ছে দুই হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এছাড়াও বাংলাদেশে এমুহুর্তে গ্যাসের মজুদ ধারণা করা হয়; ২০ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এ মজুদ থেকে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। তাতে গ্যাসের মজুদ আর ৯ দশমিক ৮৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট আছে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা।

২০০৪ সালেও শ্রীকাইলে গ্যাসের আবিস্কারের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি। তবে ওই স্থানের পাশেই দ্বিতীয় স্থানে ১৫০ লাইন কিলোমিটার দ্বি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ চালিয়ে যায় বাপেক্স। ধারণ ছিলো ৫০০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস থাকতে পারে।

উল্লেখ্য; পেট্রোবাংলার সহযোগী সংস্থা বাপেক্স তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাস পেয়েছে। ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম, ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদায় দ্বিতীয়, গত বছরের ২৮ অগাস্টে সুন্দলপুরে তৃতীয় ক্ষেত্রে গ্যাস পায় প্রতিষ্ঠানটি।
পান্থ রহমান, ঢাকা

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধন

হঠাতই অনেক পেছনে নিয়ে গেলো লন্ডন অলিম্পিক। ইতিহাস থেকে দেখানো ছবি কিংবা আলোর ঝলকানি কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির চমক-ছিলো সবই। প্রায় চার ঘণ্টার চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুক্রবার রাতে লন্ডনে শুরু হলো মর্ত্যের বুকে সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিক গেমসের ত্রিশতম আসর

বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দ্বিতীয়বারের মতো অলিম্পিকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রানী এলিজাবেথএর আগে ১৯৭৬ সালে কানাডার রাণী হিসেবে মন্ট্রিয়েল অলিম্পিকের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রানীর স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সভাপতি জ্যাক রগ উপস্থিত ছিলেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রগ, আর স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির সভাপতি সেবাস্টিয়ান কো

রাণীর ঘোষণার পরপরই আতশবাজির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে অলিম্পিক স্টেডিয়ামের আকাশ অলিম্পিক পতাকা ওড়ানোর সময় উপস্থিত ছিলেন বক্সিং গ্রেট মোহাম্মদ আলী

অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর আগে ৮ হাজার বহনকারীর হাত ঘুরে ৮ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে মশাল স্পিড বোটে করে তরুণ ফুটবলার জেন বেইলি মশাল নিয়ে আসেন স্টেডিয়ামে ঐ বোটের চালক ছিলেন ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহামবেইলির কাছ থেকে মশাল নেন রোয়িংয়ে ৫টি অলিম্পিক সোনা জয়ী স্যার স্টিভ রেডগ্রেভ

এ সময় অ্যাথলেটদের পক্ষে শপথ পাঠ করেন তায়কোয়ান্দো তারকা সারাহ স্টিভেনসনরেফারিদের শপথ পাঠ করেন মাইক বাসি ও কোচদের শপথ পাঠ করেন এরিক ফেরেল এমবিই

স্যার রেডগ্রেভ মশাল তুলে দেন সাত তরুণ অ্যাথলেটের একটি দলের হাতেতারা পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে প্রজ্বালন করেন স্টেডিয়ামের মূল মশাল

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের শতাধিক দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন

বিশ্বের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে মর্যাদার ক্রীড়া আসর অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শৈল্পিক দক্ষতায় তুলে আনা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ইতিহাস২৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে এক হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবীর অংশ গ্রহণে দেখানো হয়েছে যুক্তরাজ্যের অবদান

এর আগে স্থানীয় সময় রাত আটটা বারো মিনিটে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও নিখুঁতভাবে টিউনিংকরা একটি ঘন্টার ধ্বনি বাজিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানঘন্টা বাজান ট্যুর ডি ফ্রান্স জয়ী ব্র্যাডলি উইগিন্স

অস্কার বিজয়ী সুরকার ড্যানি বয়েল বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে অনন্য দক্ষতায় ব্যবহার করেছেন আধুনিক প্রযুক্তিতার পরিচালনায় বিস্ময়ের দ্বীপ অনুষ্ঠানের শুরুতে তুলে ধরা হয়েছে যুক্তরাজ্যের গ্রামীণ সবুজ ও সমাহিত পটভূমিখামারের আসল গবাদি পশুই ব্যবহার করেন বয়েলদেখানো হয় গ্রামীণ ক্রিকেট ম্যাচও

জেরুসালেম, ড্যানি বয়, ফ্লাওয়ার অব স্কটল্যান্ড ও ব্রেড অব হেভেন- এই চার গানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের চার দেশকে তুলে ধরা হয়েছেউইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অমর নাটক টেমপেস্টের ছোট্ট অংশ এ সময় ব্যবহার করেন বয়েলনিপুণ দক্ষতায় দেখানো হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব

এরপর বড় পর্দায় দেখানো হয় সিক্রেট এজেন্ট জেমস বন্ডের একটি শর্ট ফিল্মএর শেষ পর্যায়ে একটি হেলিকপ্টারে করে ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথকে নিয়ে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পৌঁছান বর্তমান বন্ড ড্যানিয়েল ক্রেইগরাণী স্টেডিয়ামে আসার পরপরই বেজে ওঠে ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীত

পরের পর্বটি শিশুদেরজেকে রাওলিংয়ের জনপ্রিয় চরিত্র জাদুকর হ্যারি পটার ও তার প্রধান শত্রলর্ড ভলডারমট আরেকবার মুখোমুখি হন অলিম্পিকের উদ্বোধনী আসরেবরাবরের মতো হেরেই বিদায় নিতে হয় ভলডারমটকেছিলেন ছোট-বড় সবার প্রিয় চরিত্র মিস্টার বিন খ্যাত রোয়ান অ্যাটকিনসন

যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি ও তার বিবর্তনকে তুলে ধরার সম্ভাব্য চেষ্টাই করেছেন বয়েলগ্রামীণ সংস্কৃতি তুলে ধরার পর ব্যস্ত নগর জীবনের অস্থির তারুণ্য ও হালের পপ-সংস্কৃতিতেও সামনে নিয়ে আসেন তিনিএ সময় জনপ্রিয় গান আর চলচ্চিত্রের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়শিল্পের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের গ্ল্যামার জগকেও সমানভাবে তুলে ধরা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে

সর্বক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের সফল ব্যক্তিদের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন বয়েলঅলিম্পিক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট একেই বলেছেন, যুক্তরাজ্যের বৃহ একক বিজ্ঞাপনওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা ডব্লিউডব্লিউডব্লিউর জনক স্যার টিমোথি বার্নার্স লিও ছিলেন মঞ্চে

শুধু হালকা বিষয় দেখানোই নয়, জীবন-মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের সংগ্রামকে সামনে নিয়ে এসেছেন তিনিকোরিওগ্রাফার আকরাম খানের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি দলের এই পরিবেশনার পরপরই শুরু হয় দলগুলোর মার্চপাস্ট

ঐতিহ্য মেনেই সবার আগে মার্চপাস্টে অংশ নেয় গ্রিস, এরপর বর্ণক্রম অনুসারে আসে অন্যরাএর আগে ১৮৯৬ সালের এথেন্স অলিম্পিকের মশাল প্রজ্বালনের দৃশ্য দেখিয়ে বর্তমানে ফেরানো হয় দর্শকদের৭০ দিনের মশাল র্যালির একটি ভিডিও চিত্রও দেখানো হয় এ সময়

বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগরবাংলাদেশের অন্য চার প্রতিযোগী হলেন শারমিন আক্তার রত্না, ইমদাদুল হক মিলন, মোহন খান ও সাইক সিজারএ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তাদের অভিনন্দন জানান

১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে শনিবার লড়বেন রত্নাএর আগে শুক্রবার আর্চারির বাছাই পর্বে অংশ নিয়ে ৬১তম হয়েছেন মিলন

সবার শেষে মার্চপাস্টে আসে স্বাগতিক যুক্তরাজ্যএ সময় প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট মিডলটন এবং দর্শকরা তাদের অভিনন্দন জানান

এটি লন্ডনে তৃতীয় অলিম্পিকএর আগে ১৯০৮ ও ১৯৪৮ সালে অলিম্পিক আয়োজন করেছিল ইংল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের রাজধানী

স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১২ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ১২ ঘন্টা আগে ৩ মিনিটে ৪০ বার ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমে বিগ বেন ঘোষণা করে অলিম্পিকের আগমনী বার্তা৬০ বছর পর প্রতি ঘন্টায় ঘণ্টা বাজানোর ব্যতিক্রম করলো বিগ বেনএর আগে ১৯৫২ সালের ১৫ ফেব্রয়ারি রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর সর্বশেষ নির্ধারিত সময়ের বাইরে বেজেছিল বিগ বেনশুধু লন্ডনের বিগ বেনই নয়, যুক্তরাজ্যের সব ঘণ্টাই বেজে ওঠে এক সুরে

নব নির্মিত অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বসে ৮০ হাজার ও টেলিভিশন পর্দায় ১ বিলিয়ন দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন
১৪ বিলিয়ন পাউন্ডের এই অলিম্পিকে ২৬টি খেলায় ৩০২টি ইভেন্টে ২০৪টি দেশের ১৪ হাজার সাতশ প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন
২ অগাস্ট সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরেরশুরু হবে ২০১৬ রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের জন্য প্রতীক্ষা
সংবাদ: সংগ্রহ

ট্যাংকারডুবি: তেল নিঃসরণ নিয়ে উদ্বেগ

বাংলাদেমের মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া ট্যাংকার তেকে তেল বের হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে পরিবেশের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে; ৭ লাখ লিটার পেট্রোল আর ডিজেল নিয়ে তেল বিপণনকারী সংস্থা যমুনার এই ট্যাংকারটি দক্ষিণাঞ্চলের ডিপো,  বরিশালে যাচ্ছিলো। তবে বুধবার রাতের বেলায় কালিগঞ্জ এলাকায় ওই ট্যাংকারটি দুর্ঘটনায় পরে। ট্যাংকারের নাম মেহেরজান। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে; ফজলুল হক-৩ নামের এক কার্গোর সঙ্গে ধাক্কায় ট্যাংকারটি মাঝনদীতে ডুবে যায় এবং ডুবে থাকা ট্যাংকার থেকে যে তেল নিসৃত হচ্ছে। বরিশালের জেলেরা জানিয়েছেন; ডুবে যাওয়া মেহেরজান ট্যাংকার থেকে পরদিন থেকেই তেল বের হতে দেখা যাচ্ছে।

যমুনার বরিশাল ডিপোর কর্মকর্তারা মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি রিয়াজ হোসেনকে জানিয়েছেন, ট্যাংকারের ইঞ্জিন বা বাতাস বের হওয়ার পাইপ দিয়ে তেল নিসৃত হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন অবশ্য আশ্বস্থ করেছে এরই মদ্যে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্যাংকারের অবস্থান চিহ্নিত করেছে। দ্রুতই উদ্ধার কাজ শুরু হবে। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিকী টেলিফোনে জানান; ট্যাংকার না তুলে পানির নিচ থেকে তেল সরিয়ে নেওয়া সম্ভভ হবে না। তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বেষ্টনি দেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, মেহেরজান ট্যাংকারে জ্বালানি ৬১০ টন জ্বালানী তেল আছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শক্তির উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা-এর ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। ফরে অন্য কোন উপায়ে তেল ছড়িয়ে যাওয়া ঠেকানো বা তেল তুলে ফেলার প্রতি গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে অনেকে পাইপের মাধ্যমে তেল উত্তোলনের বিষয়টি ভেবে দেখার কথা বলেছেন।
তবে দূষণ দ্রুত যেন ছড়িয়ে না পরে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেছেন, তেলের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ট্যাংকার মালিকের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী আদায় করা হবে।
উল্লেখ্য; ট্যাংকারেরকর্মী নিজাম উদ্দিন (৩৮) এখনও নিখোঁজ আছেন।
পান্থ রহমান, ঢাকা, বাংলাদেশ
#

শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২

নেপালের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় নিয়ে আলোচনা

২৬ জুলাই, ঢাকা:
বিদেশি মুদ্রার মজুদ ঠিক রাখা এবং চাপ কমাতেই সরাসরি টাকা ও রুপির বিনিময় ব্যবস্থা চালুর আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে। খুব দ্রুতই বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন; দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের সংগঠন সার্ক-এর আওতায় চেষ্টা চলছে একটি আঞ্চলিক মুদ্রা বিনিময় পদ্ধতি খুঁজে বের করার। সেই বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। তবে এর আগেই ঢাকা ও কাঠমান্ডু দ্বিপক্ষীয়ভাবে নিজেদের মধ্যে মুদ্রা বিনিময়ের কাজটি শুরু করবে।”

বিষয়টি আজ শনিবার নেপালে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উঠতে পারে বলে জানান তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেবেন বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন; তিনি নেপালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। উদাহরণ হিসেবে ওই কর্মকর্তা জানান; ভারতের রুপি নেপালের যে কোন জায়গায় চলে এবং সমমান নিয়েই চলে। কেউ ভারতীয় রুপি নিয়ে নেপালে গেলে সেখানে হোটেলে থাকতেও ওই রুপি দিয়েই কাজ চালানো যায়। বাংলাদেশ তেমনই একটি চুক্তি করতে চায় যেখানে নেপাল গেলে বাংলাদেশের টাকা দিয়ে কাজ চালানো যাবে। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতিও কমবে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সূত্র জানিয়েছে; প্রতি বছর প্রায় হাজার ত্রিশেক বাংলাদেশি পর্যটক নেপালে বেড়াতে যান; সেখানে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করেন। এছাড়াও ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ, নেপালে ১৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। নেপাল থেকে আমদানি করেছে ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। ফলে সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে অর্থ বিনিময়ের চুক্তিতে গেলে লাভবান হবে বলেই মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওই কর্মকর্তা।

উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ছাড়াও খাদ্যপণ্য, তৈরি পোশাক, টিস্যু, ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য, ওষুধ ইত্যাদি পণ্যের ওপর শুল্ক হার পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনার চিন্তাও চলছে বলে জানা গেছে বাণিজ্যমন্ত্রনালয় সূত্রে। কাঠমান্ডু শাকসবজি ও ফলমূলের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা চায়। আর তার বিনিময়ে নেপাল কৃষিপণ্য, মাছ ও অন্যান্য পণ্যে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ভুটানকে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে আর সেই সুবিধা নিয়ে অনেক নেপালি পণ্য থিম্পু হয়ে ঢাকায় ঢুকছে।

বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের ওই সূত্র জানিয়েছে; ভারত হয়ে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সরাসরি বাস সার্ভিস চালুর কথাও চিন্তা করছে দুই দেশ। বাংলাদেশ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এরই মধ্রে কাঠমান্ডু বাস সার্ভিস চালুর জন্য একটি চুক্তিরও খসড়া করা হয়েছে এবং তা নেপালের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি জানান, “দ্রুতই চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে।”

এর বাইরে কাঠমান্ডু থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে বাংলাদেশ নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজ করছে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের কথাও ঠিক হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই নেপালের পররাষ্ট্র সচিব দূর্গা প্রসাদ ভট্টরাই ঢাকায় এসে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করবেন।
পান্থ রহমান। ঢাকা, বাংলাদেশ।

পত্রিকা-সাময়ীকিতে হুমায়ূন

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার হলেও হুমায়ূন আছেন সাবর মাঝে। এমনকি জাতীয় দৈনিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়েই থাকছেন হুমায়ূন। শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকীর প্রায় প্রতিটিতেই হুমায়ূন আছেন ‘প্রধান খবর’ হয়ে। হুমায়ূনকে নিয়ে লেখা কিংবা হুমায়ূনের লেখাগুলো সম্পর্কেই আজকের প্রতিবেদন।

‘নন্দিত নরক’ ছেড়ে স্বর্গের পথে বরেণ্য কথা সাতিহ্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ধারেকাছে নেই; তবুও যেন খুন কাছেই আছেন হুমায়ূন। আছেন আত্মায়, মন-মননে। হুমায়ূন যেন আকড়ে ধরে আছেন বাঙালীর সত্ত্বা। জাতীয় দৈনিকের সাপ্তাহিক সাময়িকীগুলো যেন তারই প্রমান। এ সপ্তাহের সাহিত্য আয়োজন তাই শুধুই হুমায়ূনের নামে। হুমায়ূনের জন্যেই লেখা হয়েছে ‘মৃত্যু হোক লয়’ ... কারও চোখে ‘হুমায়ূন বৃষ্টি ও জোছনার এপিটাফ’ ... কেউ বলেছেন তিনি ‘আমাদের জীবনের ঘনিষ্ট রূপকার’। কারও কাছে হুমায়ূন ‘সাহিত্যের জাদুকর’ ... কারও জন্যে ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ অথবা ‘সোনা ফলানো অচিন জাদুকর’। যে যেভাবেই স্মৃতিচারণ করুক প্রায় সবক্ষেত্রেই আছে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস-গল্প-কবিতা-গান কিংবা লেখকের তৈরি করে যাওয়া চরিত্রগুলো।
হুমায়ূনের ডাকনাম ‘কাজল’ নামে হুমায়ূনের মা’য়ের লেখা মানুষকে যেমন আবেগী করেছে তেমনি কোন কোন পত্রিকা হুমায়ূনকে মনে করিয়ে দিয়েছে; তারই নিজের জবানীতে। ‘পাঠকের নিজস্ব হুমায়ূন’ সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন ‘কিছু আলৌকিক ঘটনার বয়ান’। ‘মৃদু মানুষের দ্রষ্টা’ হুমায়ূনের গল্পের পুনঃমুদ্রনও হয়েছে।
‘জনপ্রিয়তা কি শিল্পের শত্রু?’ সাময়িকীর স্মরণপাতায় তোলা প্রশ্নের জবাব না মিললেও ‘উড়ে যাওয়া এই একলা পাখি’ হুমায়ূনের গল্প-উপন্যাসজুড়ে থাকা চরিত্রগুলোকে রোমন্থন করেছেন লেখকরা। মনে করিয়ে দিয়েছেন হিমু, পরী, নিলু কিংবা রাবেয়াদের।
সাক্ষাৎকারে হুমায়ূনের জবানীতে আছে ‘যখন সময় হবে, চলে যাবো’ ... প্রশ্ন হলো; সময় হয়েছিলো কী? নাকি অভিমানে, সময়ের আগেই চলে গেলেন আপনি, প্রিয় লেখক!
পান্থ রহমান

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১২

বাংলাদেশের ২৬ জেলে অপহৃত বঙ্গোপসাগরে

২৫ জুলাই, ঢাকা:
মাছ ধরা জেলেদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারে হামলা চালিয়ে ২৬ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে দস্যুরাবঙ্গোপসাগরের পক্ষীদিয়া অঞ্চলে ঘটনাটি ঘটেছেট্রলারে হামলা করে জেলেদের সঙ্গে সঙ্গে দুটি ট্রলারও নিয়ে গেছে দস্যুরাঘটনাটিতে ঘটেছে মঙ্গলবার দিবাগত রাতেগতকাল বুধবার দুপুরে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া জেলেরা সৈকত সংলগ্ন জেলা বরগুনা পাথরঘাটায় ফিরে এসে জানিয়েছে; এমন তথ্য

ফিরে আসা জেলেরা অপহৃতদের সংখ্যা ২৬ বলে নিশ্চিত করলেও অপহৃত সকলের নাম পরিচয় বলতে পারেনিতারা জানিয়েছেন;  সিদ্দিক মাঝি, চুন্নু মাঝি, জামাল, নেছার, কাইউম মাঝি, বাদল মাঝি, কবির এবং জুলহাস মাঝির নামবাকি ১৮ জন সম্পর্কে তারা পরিস্কার ধারণা দিতে পারেনিফিরে আসা জেলারা জানায়; তাদের সবারই বাড়ি বরগুনা জেলার সদর ও পাথরঘাটা উপজেলায়

এফবি হরিণঘাটানামের একটি ট্রলার দস্যুরা দখল করে নিয়ে যায় বরে জানায় ফিরে আসা জেলেরাদ্বিতীয় জাহাজটির নাম তারা বলতে পারেনি

জানা গেছে, ২৪ জুলাই, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে একদল দস্যু মাছের খোঁজে নোঙ্গর করে থাকা ১৫ থেকে ২০টি ট্রলারে আচমকা হামলা চালায়তারপর ওই ট্রলারগুলোর বেশিরভাগ মাঝিকে অপহরণ করে সঙ্গে নিয়ে যায়

এ বিষয়ে পাথরঘাটা কোস্টগার্ডের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি জানা গেছে; দস্যুরা নিজেদেরকে সাগর বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়
পান্থ রহমান, ঢাকা

অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রতিশ্রুতি: পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হবে না


২৫ জুলাই, ঢাকা:
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ঋনচুক্তি বাতিলের বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশের অর্থমন্তী আবুল মাল আব্দুল মুহিতসাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি বাতিল করলেও বিষয়টি তারা আবারও বিবেচনায় রাখবে বলেই বিশ্বাস অর্থমন্ত্রীরতার মতে; সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগের পর নিশ্চিত করেই বিশ্বব্যাংকের কোন সমস্যা থাকবে না

উল্লেখ করা যেতে পারে; পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলো বিশ্বব্যাংকদিয়েছিলো চারটি শর্তসেই শর্তের অংশ হিসেবে জড়িত সকল সরকারি ব্যক্তি বা আমলা এবং রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যাক্তিদের তদন্ত চলা অবস্থায় অব্যাহতি বা ছুটি দিতে হবেসেই মতো ছুটিও দেওয়া হয়েছে ওই ব্যাক্তিদের

আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মুহিত বলেছেন; “অভিযোগের কোনো প্রমান না থাকলেও একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে ছুটি দেওয়া হয়েছেসাবেক যোগাযোগমন্ত্রীও নিজেকে নির্দোষ দাবী করে তদন্তে সহযোগিতার স্বার্থে দায়িত্ব ত্যাগ করেছেন

এখণও পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠামো প্রকল্প বিষয়ে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে মুহিত বলেন; “পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এই বছরেই শুরু হবে এবং আমরা নিশ্চিত করছি যে, পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পে কোন ধরনের দুর্নীতি থাকবে না

দুর্নীতির আশঙ্কা দূর করার জন্য তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রীবলেন, “দুদক তদন্ত শুরু করেছে ২০১১ সালের অগাস্টেতাতে এখনও তারা দুর্নীতি পায়নিতদন্ত এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে

বিশ্ব ব্যাংকসহ পদ্মাসেতু নির্মানে যারা সহযোগিতা করতে চেয়েছিলো সেই দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রীবলেন; “আইডিবি বা ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক জানিয়েছে, তারা আগ্রহীজাইকাও সার্বক্ষণিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেআলোচনা অব্যাহত রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গেও

উল্লেখ্য; গত ২৯ জুন ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে দেয়অন্য উপায় না থাকায় মান বাঁচাতে গত ১৩ জুলাই মন্ত্রী পদ থেকে সরে যান সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনআমলাদের দেওয়া হয় ছুটি
# পান্থ রহমানঢাকা

শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১২

সমুদ্র বিলাস

সমুদ্র বিলাস তার বাড়ির নাম। এ বাড়িটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে খ্যাত বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে। প্রতি মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন সমুদ্র বিলাসে; সেন্টমার্টিনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার আশায়। এটি অন্য দশটি দ্বীপের মতোই সাধারণ দ্বীপ ছিল।
এ দ্বীপের ভ্রমণকাহিনি ঘিরে তাঁর লেখা দুটি বই দারুচিনি দ্বীপ ও রুপালি দ্বীপ প্রকাশিত হওয়ার পরে দেশে-বিদেশের পর্যটকদের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমণে আগ্রহ বাড়ে। পাশাপাশি পর্যটনশিল্প বিকাশে তাঁর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ দ্বীপে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সর্বপ্রথম ঢাকা থেকে এসে সমুদ্র বিলাস নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।

১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা জোলেখা খাতুনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২২ শতক জমি কেনেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে ১৯৯৪ সালে তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই সময় তিনি স্থানীয় বাসিন্দা মো. শফিক ও মো. উসমানকে বাড়িটি দেখাশোনার জন্য মাসিক বেতনভুক্ত করে দায়িত্ব দেন। সেখানে তিনি একটি বাড়ি তৈরি করেছেন। পরে আমিও ১৯৯৮ সালে কিছু জমি কিনে সেখানে একটি কটেজ নির্মাণ করি। তাঁর অনুপ্রেরণায় ঢাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তি ওই দ্বীপে জমি কিনে কটেজ নির্মাণ করে। ফলে পর্যটনশিল্প বিকাশের পাশাপাশি প্রবাল দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে।
সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা ফিরোজ আহমদ খান হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে বলেন, একমাত্র হুমায়ূন আহমেদের অনুপ্রেরণায় অবহেলিত এ দ্বীপটি পৃথিবীজুড়ে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তিনি ১৯৯৪ সালে দ্বীপে বাঁশের বেড়া ও টিনশেডের একটি কটেজ নির্মাণ করে এ দ্বীপের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেন। আজ তাঁর মৃত্যুতে পুরো দ্বীপবাসী মর্মাহত ও শোকাহত।
সেন্টমার্টিনের সমুদ্র বিলাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিক ও মো. উসমান বলেন, এ দ্বীপে হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৪ সালে প্রথম একটি বাঁশের বেড়া ও টিনশেডের বাড়ি নির্মাণ করেন। তখনো এ দ্বীপে অন্য কোনো কটেজ তৈরি হয়নি। তাই দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক বাড়িটি একনজর দেখার পাশাপাশি ছবি তোলার জন্য ছুটে আসেন।
তাঁরা আরও বলেন, সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নাট্যপরিচালক মাসুদ রানা, স্ত্রী শাওন, দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিদসহ হুমায়ূন আহমেদ এসেছিলেন। বর্তমানে বাড়িটি ইজারা নিয়েছেন ব্যবসায়ী আবদুর রহমান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও স্ত্রী শাওন।

আবদুর রহমান আরও বলেন, স্যারের অসংখ্য প্রকাশিত বই থেকে দারুচিনি দ্বীপ, কোথাও কেউ নেই, আমার আছে জল, হিমুর মধ্য দুপুর, মিসির আলী আপনি কোথায়, শ্রাবণ মেঘের দিন নামে ছয়টি কটেজ ও শঙ্খনীল কারাগার নামে একটি রেস্তোরাঁ তৈরি করা এবং ওই এলাকাকে নুহাশ পয়েন্ট নামকরণ করা হয়েছে।
সংবাদ: সংগ্রহ

মার্কিন কংগ্রেসে শুনানি: ‘র‌্যাব ডেথ স্কোয়াড

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে ৠাবের বিরুদ্ধে অব্যাহত নির্যাতন, হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার ও গুমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবারও র‌্যাবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে। র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের যেসব অভিযোগ আছে, সে সম্পর্কে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক গতকাল বৃহস্পতিবার ওই শুনানিতে কথা বলেছেন।

মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের শুনানিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, শ্রমিক নির্যাতন, বিডিআর বিদ্রোহে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানাভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি বাংলাদেশের ওপর নিয়মিত নজরদারি জারি রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার উচ্চপর্যায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, র‌্যাবের নির্যাতনকে দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে গুমের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শ্রমিক নেতাদের ওপর নির্যাতনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এসব বিষয়ে শুনানির জন্য ১৯ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে ওই শুনানির আয়োজন করা হয়। মার্কিন কংগ্রেসে মানবাধিকারবিষয়ক ওই শুনানিতে রবার্ট ও ব্লেক ছাড়াও মার্কিন শ্রম দপ্তরের সহকারী উপপরিচালক রবার্ট বিয়েল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া বিভাগের পরামর্শক পরিচালক জন শিফটন এবং আমেরিকান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল লেবার সলিডারিটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক টিমোথি রিয়ান বক্তব্য দেন।

রবার্ট ব্লেক তাঁর বক্তৃতার একটি বড় অংশজুড়ে উল্লেখ করেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় মানবাধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের উদ্বেগের বিষয়গুলো। এর মধ্যে উঠে এসেছে র‌্যাবের প্রসঙ্গ। এ নিয়ে ব্লেক বলেন, পুলিশ ও সেনাসদস্যদের নিয়ে গঠিত আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন প্রচার অব্যাহত রয়েছে। মানবাধিকার পরিস্থিতির কারণে র‌্যাবকে যেকোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে আমরা বিরত রয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে একজন সাবেক মার্কিন সেনা গত বছর চার মাসের জন্য র‌্যাবের অভ্যন্তরে কাজ করেছেন। এর লক্ষ্য ছিল, র‌্যাবের যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন শিফটন শুনানিতে দেওয়া বক্তৃতায় র‌্যাবকে ডেথ স্কোয়াড হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে র‌্যাব ভেঙে দিয়ে এর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের তদন্তের অঙ্গীকার করেছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসে এখন উল্টোপথে হাঁটছে দলটি।
সংবাদ: সংগ্রহ

বাংলাদেশের ১ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত


দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে মাত্র ১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশএ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে জিতল বাংলাদেশ নাসির হোসেনের ৫০ রানের ওপর ভর করে আয়ারল্যান্ডের সামনে ১৪৭ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় বাংলাদেশপুরো ২০ ওভারে ৬ উইকেট ১৪৫ রান তোলে স্বাগতিকরাইলিয়াস সানি ও মাহমুদুল্লাহ দুটো করে উইকেট নেন
প্রথম ম্যাচের মতো সফরের দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুটা ভালোভাবে করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরামাত্র ৯৮ রান তুলতেই শীর্ষ ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপের মুখে পড়ে যায় মুশফিক বাহিনীতামিম-সাকিবরা রান না পেলেও মোহাম্মদ আশরাফুল নাসিরের ব্যাটে ৬ উইকেটে পুরো ২০ ওভারে ১৪৬ রান তোলে বাংলাদেশ
৩৩ বলে চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন নাসিরএছাড়াও আশরাফুল ৪৬ বলে ৩৮ রান করেছেনপুরো ২০ ওভারে ১৪৬ রান তোলে টাইগাররা।
আজ ২০ জুলাই, বেলফাস্টে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শুরুটা ধীরগতিতে করেছে বাংলাদেশ গত ম্যাচে ৩১ রানের ইনিংস খেলা তামিম ইকবাল সাজঘরে ফিরেছেন শূন্য রানেসপ্তম ওভারের প্রথম বলে মাত্র ১১ রান করে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসানদুই ওভার পরে দলীয় ৫৫ রানের মাথায় দুর্ভাগ্যবশত রানআউটের ফাঁদে পড়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমএক ওভার পরে মাহমুদুল্লাহও আউট হয়েছেন মাত্র ৩ রান করে
আয়ারল্যান্ড সফরের প্রথম ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকেতবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ৭১ রানে জিতে শুরুটা ভালোভাবেই করেছিল মুশফিক বাহিনীআর প্রথম ম্যাচের মতো আজও প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুশফিকুর রহিম
সংবাদ: সংগ্রহ

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১২

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সংলাপে বসতে হবে


বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে করতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে খুব দ্রুত গঠনমূলক সংলাপে বসতে হবে। একসঙ্গে বসে সমঝোতার মাধ্যমে এমন একটি প্রক্রিয়া বের করতে হবে, যাতে স্বাধীন, স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনটা সম্পন্ন করা যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে ড্যান মজীনা এসব কথা বলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলায় (ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল) তিন দিনের সফরের শেষ দিনে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড্যান মজীনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারকে নিজেদের মধ্যে আলাচনা করে সীমান্তে অস্থিরতা দূর করতে হবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বৈরিতা কমিয়ে আনা দরকার।
ড্যান মজীনা আরও বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর দেশ সব সময় পাশে থাকবে। তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সফল কাজগুলো চিহ্নিত করছেন। এর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড, সহিংসতা রোধ, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি কমানো, দুর্যোগ মোকাবিলায় অংশীদারিত্ব, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ জোগাতে অর্থ পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অর্থ পাচারবিরোধী যে আইন রয়েছে, তা খুবই শক্তিশালী। আশা করি এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হব।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ বিভিন্ন সরকারের আমলে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন এবং সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মজীনা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মামলার তদন্তের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই।

মজীনার দাবি, বাংলাদেশ-মার্কিন অংশীদারমূলক উন্নয়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিজের চোখে দেখার জন্য তাঁর এই সফর।
গত মঙ্গলবার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা পরিদর্শনের মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত বৃহত্তর ময়মনসিংহে তিন দিনের সফর শুরু করেন।
সংবাদ: সংগ্রহ

হুমায়ূন আহমেদ: স্বপ্নযাত্রার সমাপ্তি!


চলে গেলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলাদেশ সময় আজ বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই, রাত সোয়া ১১ টার দিকে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি....রাজিউন।
সংক্ষিপ্ত জীবন, তবু বন্য‍ঢ্য
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর; শীতের রাতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের কুতুবপুর গ্রামে জন্ম হয় হুমায়ূন আহমেদের। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশের কর্মকর্তা; মা আয়েশা ফয়েজ গৃহিনী। হুমায়ূন প্রথম সন্তান।
তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার-বিজ্ঞানী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্য লেখক।
ফয়জুর রহমানের চিন্তায় ছিল, তাঁর প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। তিনি মেয়ের নামও ঠিক করে রাখেন। কন্যাসন্তানটির জন্য তিনি একগাদা মেয়েদের ফ্রকও বানিয়ে রাখেন। অথচ জন্ম নিলেন হুমায়ূন। তাঁর এই পুত্র সন্তানটিকেই ফয়জুর দীর্ঘদিন মেয়েদের সাজে সাজিয়ে রেখেছিলেন। এমনকি তাঁর মাথার চুলও ছিল মেয়েদের মতো লম্বা। লম্বা চুলে মা বেণি করে দিতেন। বেণি করা চুলে রং-বেরঙের ফিতা পরে হুমায়ূন আহমেদের শৈশবের শুরু।

হুমায়ূন আহমেদের শৈশবের প্রথম অধ্যায়টি যতটা স্নেহ ও মমতায় কেটেছে, দ্বিতীয় অধ্যায়টি কেটেছে ততটা বঞ্চনার ভেতর দিয়ে। শৈশবে তাঁর মা টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার পর তাঁর স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়। তিনি কাউকেই চিনতে পারছেন না, এমনকি তাঁর ছেলেকেও না। ফলে হুমায়ূন আহমেদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নানার বাড়ি মোহনগঞ্জে। সেখানে দুই বছর তিনি নানা-নানির আদরে বেড়ে ওঠেন।
দুই বছর পর মা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর ১০ বছর বয়স পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কেটেছে হেসে-খেলে। বাবার চাকরি সূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি শৈশব কাটিয়েছেন।
সিলেট থেকে বাবা বদলি হন দিনাজপুরের জগদ্দলে। জঙ্গলের ভেতর এক জমিদার বাড়িতে তাঁরা থাকতেন। জগদ্দলের দিনগুলি তাঁর কাছে ছিল হিরণ্ময়। বাবার সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরতেন হুমায়ূন। গুলিভর্তি রাইফেল হাতে বাবা তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতেন। ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে অল্প অল্প আলো আসত। থমথমে পরিবেশ। বিচিত্র সব পাখি ডাকত। বুনো ফুলের গন্ধ। পরিষ্কার বনে চলার পথ। বিচিত্র বুনো ফল। জঙ্গল পেরোলেই নদী। চকচকে বালির ওপর দিয়ে স্বচ্ছ পানি বয়ে যেত। দুপুরে সেই নদীতে গোসল করতেন। একবারেই আলাদা এক জীবন।

আবার বদলি পঞ্চগড়ে। সেখানে ভোরবেলা বাসার সামনে দাঁড়ালে কাঞ্চন জঙ্ঘার তুষার-শুভ্র চূড়া চোখের সামনে ঝলমল করে উঠত। পঞ্চগড় থেকে এবার রাঙামাটি। পাহাড়ি উপত্যকায় আবার সেই উদ্দাম ঘুরে বেড়ানোর দিন। হুমায়ূন আহমেদের শৈশব কেটেছে এমনি স্বপ্নময়তার ভেতর দিয়ে।
শৈশবে হুমায়ূন আহমেদ যত জায়গায় গেছেন তার মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছিল দিনাজপুরের জগদ্দল। এর প্রধান কারণ ছিল, তাঁরা যেখানে থাকতেন তার আশপাশে কোনো স্কুল ছিল না। স্কুলের কথা মনে হলেই হুমায়ূন আহমেদের মুখ তেতো হয়ে যেত। মা-বাবা তাঁকে স্কুলে পাঠাতেন বটে, তবে স্কুলে সময় কাটাতেন কেবল দুষ্টুমি করে। টেনেটুনে পাস করতেন।
প্রাইমারি স্কুল পাসের পর এই হুমায়ূন বদলে যান। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে স্কুলের প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়তে থাকে। আগ্রহটা এমনই ছিল যে এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর দেখা গেল, তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছেন। ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পরীক্ষায়ও তিনি মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ১৯৭২ সালে রসায়ন বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি একই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময় ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপক যোসেফ অ্যাডওয়ার্ড গ্লাসের তত্ত্বাবধানে পলিমার কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। লেখালেখি ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত সময় দেওয়ার জন্য পরবর্তী সময় অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দেন জনপ্রিয় শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদ।
কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় নন্দিত নরকে উপন্যাস দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে তাঁর আত্মপ্রকাশ। নন্দিত নরকে যখন প্রকাশ হয়, তখনই বোঝা গিয়েছিল কথাসাহিত্যের কঠিন ভুবনে তিনি হারিয়ে যেতে আসেননি। তাঁর এই অমিত সম্ভাবনা তখনই টের পেয়ে প্রখ্যাত লেখক-সমালোচক আহমদ শরীফ এক গদ্যের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদকে অভিনন্দিত করেছিলেন। আহমদ শরীফের প্রশংসা যে অপাত্রে ছিল না, তা তো আজ সর্বজনবিদিত।
মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে তিনি তাঁর পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন। শুধু মধ্যবিত্ত জীবনের কথকতা বয়ানেই সীমিত নয় তাঁর কৃতিত্ব, বেশ কিছু সার্থক সায়েন্স ফিকশনের লেখকও তিনি। জনপ্রিয় চরিত্র মিসির আলী ও হিমুর স্রষ্টা তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের ভিতটা গড়ে ওঠে পারিবারিক বলয় থেকেই। তাঁর বাবা ছিলেন সাহিত্যের অনুরাগী। বাসায় নিয়মিত সাহিত্য আসর বসাতেন। সেই আসরের নাম ছিল সাহিত্য বাসর। গল্প লেখার অভ্যাসও ছিল তাঁর। যদিও সেসব গল্প কোথাও ছাপা হয়নি। তবে গ্রন্থাকারে তা প্রকাশিত হয়েছিল। সন্তানদের মধ্যে যাতে সাহিত্য বোধ জেগে ওঠে, সে চেষ্টা করেছেন তাঁর বাবা। মাঝেমধ্যে তিনি নির্দিষ্ট একটা বিষয় দিয়ে ছেলেমেয়েদের কবিতা লিখতে বলতেন। ঘোষণা করতেন, যার কবিতা সবচেয়ে ভালো হবে, তাকে দেওয়া হবে পুরস্কার।
হুমায়ূন আহমেদের বড় মামা শেখ ফজলুল করিম যিনি তাঁদের সঙ্গেই থাকতেন এবং যিনি ছিলেন তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী, তিনি কবিতা লিখতেন, লিখতেন নাটক এবং সেই নাটক তিনি তাঁর ভাগনে-ভাগনিদের দিয়ে বাসায় গোপনে গোপনে মঞ্চস্থও করাতেন। আর হুমায়ূন আহমেদের নিজের ছিল গল্প, উপন্যাসের প্রতি অসাধারণ টান।
হুমায়ূন আহমেদের পড়া প্রথম সাহিত্য ক্ষীরের পুতুল। যদিও তাঁর বাবার বিশাল লাইব্রেরি ছিল। কিন্তু সব বই তিনি তালাবদ্ধ করে রাখতেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, তাঁর সন্তানদের এসব বই পড়ার সময় এখনো হয়নি। কিন্তু ক্ষীরের পুতুল পড়ার পর তিনি তাঁর বাবার বইয়ের আলমারি থেকে বই চুরি করে লুকিয়ে পড়তে শুরু করলেন এবং একদিন বাবার হাতে ধরা পড়ে গেলেন। বাবা তাঁকে নিয়ে যান সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে। বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ সেখানে। যেদিকে চোখ যায় শুধু বই আর বই। বাবা তাঁকে লাইব্রেরির সদস্য করে দেন। সম্ভবত তিনিই ছিলেন এই লাইব্রেরির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য।

যদিও হুমায়ূন আহমদের প্রথম রচনা নন্দিত নরকে, তবে তারও বহু পূর্বে দিনাজপুরের জগদ্দলে থাকা অবস্থায় একটি কুকুরকে নিয়ে তিনি বেঙ্গল টাইগার নামে একটি সাহিত্য রচনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালে লেখেন নন্দিত নরকে। তারপর একে একে শঙ্খনীল কারাগার, রজনী গৌরিপুর জংশন, অয়োময়, দূরে কোথাও, ফেরা, কোথাও কেউ নেই, আমার আছে জল, অচিনপুর, এইসব দিনরাত্রিসহ দুই শতাধিক উপন্যাসের জনক তিনি।
কেবল অধ্যাপনা আর কথাসাহিত্যই নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র আগুনের পরশমণী। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে আটটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরেকটি চলচ্চিত্র শ্যামল ছায়া বিদেশি ভাষার ছবি ক্যাটাগরিতে অস্কার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।
টিভি নাট্যকার হিসেবেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তাঁর প্রথম টিভি নাটক এইসব দিনরাত্রি তাঁকে এনে দিয়েছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। হাসির নাটক বহুব্রীহি এবং ঐতিহাসিক নাটক অয়োময় বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। নাগরিক ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে। নাটকের শেষে বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হলে ঢাকার রাজপথে বাকের ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে মিছিল পর্যন্ত হয়েছিল। বাংলা নাটকের ইতিহাসে এমনটি আর কখনো হয়নি।

নাট্যকার- নির্দেশক দুই ভূমিকায়ই সমান সফল ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সফল শিল্পের আরেকটি শাখা চিত্রকলাতেও। তাঁর চিত্রশিল্পের স্বাক্ষর নিজ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো রয়েছে।
১৯৭৩ সালে গুলতেকিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে তাঁরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। শাওন ১৯৯০ সাল থেকে টিভিতে অভিনয় শুরু করেন।

বালক হুমায়ূন আহমেদ ভালোবাসতেন গাছপালা শোভিত সবুজ অরণ্যানীর ভেতর ঘুরে বেড়াতে, বেটোফেনের সুরের মতন টিনের চালে বৃষ্টি শব্দ শুনতে। এই বয়সে ও তাঁর সবুজের ভেতর হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হত, ইচ্ছে হত বৃষ্টি শব্দের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে। ইট কাঠের খাঁচায় বন্দী এই রাজধানী ঢাকা তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসত। তাই তিনি গাজীপুরের শালবনের ভেতর তৈরি করেছেন এক বিশাল নন্দন কানন নুহাশ পল্লি। তাঁর বেশির ভাগ সময়ই কাটত নুহাশ পল্লির শাল গজারির সাথে কথা বলে, বৃষ্টির শব্দের সাথে মিতালি করে।

হুমায়ূনের উপন্যাসগুলো: নন্দিত নরকে, লীলাবতী, কবি, শঙ্খ নীল কারাগার, মন্দ্রসপ্তক, দূরে কোথায়, সৌরভ, নী, ফেরা, কৃষ্ণপক্ষ, সাজঘর, বাসর, গৌরিপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাব যাব, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি।
হুমায়ূনের চলচ্চিত্র: আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারি, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত।
হুমায়ূনের পুরস্কার: একুশে পদক (১৯৯৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮)।

তথ্যসূত্র: gunijan.org.bd