রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
ভারতের দেওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করে দুই দেশের নৌবাণিজ্য প্রটোকলের
মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আরও
দুই বছরের জন্য বাড়ানো হচ্ছে ভারতের সঙ্গে নৌ-প্রটোকল চুক্তি। সোমবার ঢাকায় শুরু হওয়া বাংলাদেশ ও ভারত নৌসচিব পর্যায়ের
বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের
পর দুই দেশের প্রতিনিধিরা সচিবালয়ে নৌমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত
জানান। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দুই দিনের সচিব পর্যায়ের
বৈঠক শেষে সম্মতিপত্র সই করেন দুই দেশের নৌপরিবহন সচিব। তারা জানান; সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন চুক্তি সই
হবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ২০১৪
সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
পাশ্ববর্তী দুই দেশের
মধ্যে আন্তদেশীয় বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আওয়াত ১৯৭২
সালে সই হয়েছিলো নৌ-প্রটোকল। তাতে উল্লেখ ছিলো; পণ্য পরিবহনের জন্য বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশের নৌ-বন্দর
ব্যবহার করবে ভারত। সেই
প্রটোকলের আওতায় বর্তমানে ৭টি রুটে মোট ৫টি নৌবন্দর ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে
বাংলাদেশ। প্রটোকলের
আওতায় এ যাবত কোন ট্রানজিট মাশুল না দিলেও ‘দই খাওয়া-সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুর-জকিগঞ্জ রুটে
বন্দর ব্যবহারের জন্য বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দিতো ভারত। এই অর্থের পরিমান বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে
সচিব পর্যায়ের বৈঠকে।
বাংলাদেশের নৌপরিবহন সচিব
আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন; ভারত বাংলাদেশকে এই পরিমান অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে। তবে যেহেতু এই ফোরম মাশুল নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার রাখে না
ফলে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
মান্নান হাওলাদার বলেন; ভারত
ওই দুটি রুটে মালামাল পরিবহনের জন্য গঠনগত উন্নয়নের তাগাদা দিয়েছে।
আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের
জন্য দীর্ঘদিন ধরে দেন-দরবার চললেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে তা সম্ভব হচ্ছিলো না। একারণেই বৈঠকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর উন্নয়ন এবং সেখানে কন্টেইনার
টার্মিনাল ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সম্মত হয়েছে ভারত। আশ্বাস দিয়েছে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মানেরও।
ভারতের নৌপরিবহন সচিব
প্রদীম কুমার সিনহা জানান, আশুগঞ্জে টার্মিনাল নির্মান করা সম্ভব কি না তা খতিয়ে দেখতে
ভারতের অর্থায়নে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এটি ডোনেশন হিসেবেই করা হবে।
কোস্টাল ভ্যাসেল চালুর
বিষয়ে দুই সচিব জানান; বঙ্গোপসাগরে নয় বরং সমুদ্রের ৫০ কিলোমিটারের ভেতর দিয়ে এক
ধরনের ভ্যাসেল দুই দেশের মধ্যে মালামাল পরিবহন করতে পারে; এমন
একটি বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
কাস্টম চার্জ, ব্যাংক
সুযোগ-সুবিধা এবং আখাউড়া ও আগরতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি ট্রাক ও ট্রেলারের
মাধ্যমে ট্রানজিট মালামাল যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন প্রটোকলে। তাছাড়া উপকূলবর্তী কোস্টাল ভ্যাসেল চালু; বাংলাদেশি
ক্রুদের বন্দরে নামার অনুমতি, নৌ-পথে পাইরেসি, ডিজিটাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।
হোটেল সোনারগাঁওয়ে সচিব
পর্যায়ের দুই দিনব্যাপী এ বৈঠকে ১৭ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন নৌপরিবহন সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার। ভারতের সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির
নৌসচিব প্রদীপ কুমার সিনহা।
মঙ্গলবার চুক্তির
স্বাক্ষরের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন দুই দেশের
প্রতিনিধিদের। আলোচনার বিষয়ে নৌসচিব
মান্নান হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির শর্ত পরিবর্তন করে নৌবাণিজ্য
প্রটোকলের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ভারতের কাছ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে।
পান্থ রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন