পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১২

তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ইস্যুতে মমতার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

১৬ জুলাই, ঢাকা:
তিস্তার পানি বন্টন ইস্যুতে ভারতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সমঝোতার জন্যেও। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন; তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ইস্যুতে ভারত তাদের অভ্যন্তরীন ঝামেলা মেটাতে ব্যস্ত। তারা পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন; “যেহেতু ভারতের সরকার পদ্ধতি বাংলাদেশের মতো নয় এবং তারা ফেডারেল সরকারি পদ্ধতিতে চলে তাই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সমঝোতা না হলে তিস্তার ইস্যুটি সমাধান কঠিন। আর সে কারণেই মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তাদের বাৎচিৎ চলছে।” দীপু মনি জানিয়েছেন, “বাংলাদেশ এখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দিকে তাকিয়ে।” সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে মমতা ব্যানার্জির দিকে তাকিয়ে।

বাংলাদেশে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সংগঠন ‘ইমক্যাব’-এর যাত্রা শুরু উপলক্ষে আয়োজিত পরিচিতি সভার প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি এবং টিপাইমুখে বাধ নির্মান ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চলছে। তিনি জানান; ‘‘বাংলাদেশ ও ভারত বিশেষজ্ঞরা মিলে একটি যৌথ সমীক্ষার আয়োজন করছে টিমাইমুখে বাধ নির্মানের বিষয়টি নিরিক্ষা করে দেখতে।’’ আগামী দু’এক মাসের মধ্যেই ওই যৌথ কমিটি কাজ শুরু করতে পারবে বলেও আশাবাদী মন্ত্রী।

ডাক্তার দীপু মনির মতে; ছিটমহল বিনিময় এবং অপদখলীয় জমি হস্তান্তর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দুই দেশের মধ্যকার ছিটমহলগুলোতে ‘হেডকাউন্ট’ বা মাথাগোনার কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন; এখন শুধু ভারতের লোকসভায় বিষয়টি র‌্যাটিফাইড হওয়ার অপেক্ষা। তিনি আশা করেন, আগামী অধিবেশনেই বিষয়টির সূরাহা করে ফেলবে ভারত সরকার।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমিমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ভারত থেকে বিদুৎ কেনার প্রশ্ন উঠলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; বেশ কয়েকটি জায়গায় ঐকমত হয়েছে। তিনি বলেন; ভারত, বাংলাদেশের কাছে বিদুৎ বিক্রির ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। তবে তার জন্য দুই দেশের গ্রীডের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজও চলছে। ২০১৩ সাল নাগাদ দুই গ্রীডের সংযোগ কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। এক্ষেত্রে তিনি ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির বরাত দিয়ে জানান; ভারতের কাছ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাজার দরেই পাওয়া যাবে। এছাড়া ত্রিপুরার পালাটানা বিদুৎকেন্দ্র নির্মানের জন্য মালামাল বহনের অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশ যে সহযোগিতা করেছে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভবনার কথা জানান দীপু মনি। বলেন; “যতদূর জানি যে ওখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার পর তাদের কিছু বাড়তি থাকবে আমরা (বাংলাদেশ) সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।” তাছাড়া ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে খুলনা ও চট্টগ্রামে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট কিংবা আন্তঃদেশীয় যাতায়াতের প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; এ নিয়ে একটি কোর কমিটি গঠিত হয়েছিলো। তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তার ভিত্তিতে হয়েছে যৌথ টাক্সফোর্স। সেই টাক্সফোর্সই এখন ট্রানজিট সহ দ্বিদেশীয় যাতায়াতের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তাদের কাছ থেকে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পরই এ নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে।

সীমান্তে হত্যার প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; সীমান্তে হত্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। তারপরও যে ক’টা ঘটনা ঘটছে তার জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে শক্ত প্রতিবাদ করছে এবং ভারত সরকার ওই ঘটনাগুলোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, “দুই দেশই চায় সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে।”

আলোচনায় বাংলাদেশ ও ভারত বিষয়ক আলোচনার কথা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়েও কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি। এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পদ্মাসেতু নির্মানের জন্য সই হওয়া ঋণ চুক্তি বিশ্বব্যাংক বাতিল করলেও তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে না। কেননা বিশ্বব্যাংক তাদের অভিযোগ তুললেও সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য ও সঠিক পদ্ধতি মেনে তদন্ত করেনি।” তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক যেমন প্রশ্ন তুলেছে তেমনি বাংলাদেশও সময়-সুযোগ বুঝে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তবে আরেক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; বাংলাদেশ এখন নিজেদের টাকাতেই পদ্মাসেতু নির্মানে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে আজই (১৬ জুলাই) পদ্মাসেতু নির্মানে সহায়তা করতে আগ্রহী দেশের মানুষ ও প্রবাসীদের জন্য পৃথক দুটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার কথাও জানিয়েছেন ডাক্তার দীপু মনি।

এছাড়া মিয়ানমারের (বার্মা) অভ্যন্তরীর দাঙ্গা এবং সেই দাঙ্গার কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের প্রশ্নে ডাক্তার দীপু মনির সাফ জবাব; বাংলাদেশ চায় নিজের দেশ থেকে সকল মিয়ানমারের নাগরিক স্বদেশে ফিরে যাক। এজন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ অভিযোগ তুলবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশ চায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে। তবে এই আলোচনায় এরই মধ্যে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক অধিদপ্তর, ইউএনএইচসিআর, বালি প্রসেসসহ বড় বড় দাতাগোষ্টিরা জড়িত রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান; মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির জুলাইয়ের ১৫ তারিখে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও তাদের দেশের জরুরী অবস্থার কারণে তা পিছিয়েছে। তবে রোজা ও ঈদের পর তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি।

পান্থ রহমান
ঢাকা, বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন