পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১২

পদ্মাসেতুর অর্থায়নে জাপানের ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ পলিসি

পদ্মাসেতু নির্মানে অর্থায়নের প্রশ্নে জাপান এখনও আগের অবস্থানে আছে জাপান। অর্থাৎ তারা এখনও তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি বাংলাদেশকে টাকা দিতে আগ্রহী। তবে এ বিষয়ে এখনই ‘ফাইনাল সিদ্ধান্ত’ নিতে রাজি নয় তারা। বরং এ বিষয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ পলিসিতে চলতে চায় জাপান।

ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা জানিয়েছেন; অর্থায়নের বাকি অংশ কিভাবে আসবে এবং দূর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে তার দিকে নজর থাকছে জাপানের। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন; ডিক্যাব এর নিয়মিত আয়োজন ‘ডিক্যাব-টক’ -এর অতিথি হিসেবে এসে জাপানের রাষ্ট্রদূত আরও বলেছেন; রাজনৈতিক উত্থান-পতন স্বাভাবিক তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তারা আস্থাশীল।

জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমার কাছে প্রশ্ন ছিলো পদ্মাসেতুর দুর্নীতি এবং ওই প্রকল্পে জাপান থাকছে কিনা সেই প্রসঙ্গে। তিনি বলেন; “পদ্মাসেতু নির্মানের অর্থায়নে এখনও আমাদের (জাপান) প্রতিশ্রুতি বহাল আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের অংশটির কী হবে; কেননা ওই অংশটাই সবচে বড়। প্রকল্পটি প্রায় ৩শ কোটি ডলারের যার সিংহভাগ দেওয়ার কথা ছিলো বিশ্বব্যাংকের। সেই শূন্যতা পূরণ সহজ নয়। আমাদের পক্ষে পুরোটা তো নয়ই বরং বিশ্বব্যাংকের অংশ দেওয়া সম্ভব নয়।”

রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, পদ্মাসেতু নির্মানের পুরো টাকাটা জাপান দিয়ে দিতে পারে কিনা? ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা বলেছেন; “এত বড় অংশ তাদের জন্য দেওয়া শুধু কঠিনই নয় বরং প্রায় অসম্ভব। তিনি আরও জানান; বিশ্বব্যাংকের অংশটুকুও জাপানের পক্ষে দেওয়া কঠিন।”

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সৃষ্ট বাংলাদেশের এই ‘ঝামেলা’কে বাংলাদেশ কিভাবে কাটিয়ে উঠবে সে দিকে জাপান তাকিয়ে আছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত। তার মতে, বাংলাদেশকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন; জাপানি করদাতারা তাদের টাকার ব্যবহার নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলবেন। আমরা যে টাকাটা দেব; সেই টাকার বিপরীতে আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তারাও বাংলাদেশের অভিযোগের ইস্যুটি জানতে চাইবে।

বলা বাহুল্য; বহুল আলোচিত বাংলাদেশের পদ্মাসেতু নির্মানের খরচ ধরা ছিলো ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। এই টাকার বড় অংশটিই আসার কথা ছিলো বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে পরিচিত; বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সেইমতো প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলো বিশ্বব্যাংক। পুরো প্রকল্প প্রায় নিশ্চিতই ছিলো। বাংলাদেশের সঙ্গে বহুপক্ষের একটি সমঝোতাও হয়েছিলো আগেই। সেই সমঝোতার হিসেবে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি; এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক;এডিবি ৬১ কোটি; জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ৪১ কোটি এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক, আইডিবি’র দেওয়ার কথা ছিলো ১৪ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনসহ মন্ত্রনালয়ের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আনে বিশ্বব্যাংক। তাদের অভিযোগ অনুযায়ি; কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, কানাডার এসএনসি-লাভালিনের জন্য বরাদ্দ ৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার থেকে ১০ শতাংশ ঘুষ দাবী করে মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। যদিও শুরু থেকেই বিশ্বব্যাংকের ওই অভিযোগ আমলে নেয়নি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত অস্বীকারই করে; প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন। আর সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে পদ্মাসেতু নিয়ে করা ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এরপর থেকেই সৃষ্টি হয় ঝামেলা; মতৈক্যের।

জাইকার মাধ্যমে পদ্মাসেতুতে ৪১ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে জাপান সরে আসেনি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত জানান; তবে তাদের সরকারকেও জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। তাই এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে তারা।

শিরো সাদোশিমা বলেন; যেহেতু একটা অভিযোগ উঠেছে সেজন্য আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল করছি; এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অ্যাকশন কী হয়। কেননা বাংলাদেশের ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা উচিত।

বিনিয়োগ পরিবেশের প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন; বাংলাদেশের প্রতি তাদের ব্যবসায়ীদের আস্থা আছে বলেই বিনিয়োগ কমেনি। রাষ্ট্রদূত বলেন; আপনি যদি জানতে চান; বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী ভালো? আমি বলবো; অবশ্যই ভালো। কখনও কখনও এখানে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়; সেটা কমবেশি সব দেশেই হয়। রাজনৈতিক উত্থান-পতন সবখানেই আছে। বরং বাংলাদেশে কমই আছে।

মেট্রোরেল ইস্যুতে করা প্রশ্নের উত্তরে জাপানের রাষ্ট্রদূত জানান; ওই প্রকল্পটি নিয়ে কাজ চলছে। তবে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
পান্থ রহমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন