নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে জনগণের
ব্যাপক সাড়া পেয়ে আগ্রহীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্য দুটি ব্যাংক হিসাব খোলার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এক মাসের বেতন অনুদান হিসাবে
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার
বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
তিনি বলেন,
একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হবে যাতে আগ্রহী বাংলাদেশিরা এ দেশীয়
মুদ্রায় তাদের ইচ্ছেমাফিক অর্থ দিতে পারেন। আর দ্বিতীয়টি খোলা হবে প্রবাসীদের
জন্য, যাতে তারা বিদেশি মুদ্রায় সহায়তা দিতে পারেন।
এ দুটি অ্যাকাউন্ট কীভাবে পরিচালিত হবে তার পদ্ধতি ও নীতিমালা
চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সচিব জানান।
“যারা স্বেচ্ছায় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বা নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান, তাদের অর্থই এ হিসাব দুটিতে
নেওয়া হবে।
এজন্য কাউকে চাপ দেওয়া হবে না। যে কোনো শ্রেণী বা পেশার মানুষ এ হিসাবে অর্থ জমা দেওয়ার সুযোগ পাবেন”, বলেন তিনি।
২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার
জন্য চুক্তি করলেও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সম্প্রতি তা বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক।
এরপর প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের রূপরেখা তুলে ধরেন। ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনার কথাও তিনি বলেন।
এরপর বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের
পক্ষ থেকে এ প্রকল্পে সহায়তার বিভিন্ন ঘোষণা দেওয়া হয়।
মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, “জনগণের কাছ থেকে অভূতপূর্ব
সাড়া পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং যারা এ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় অর্থ
দিয়েছেন বা আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।”
পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের এ উদ্যোগকে সরকারের ‘নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের
চেষ্টা’ বলে বিরোধী দল যে অভিযোগ এনেছে,
সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সচিব বলেন, এ ধরনের কোন আলোচনা মন্ত্রিসভার
বৈঠকে হয়নি। তবে এতে কারো কাছে থেকে জোর করে কিছু নেওয়া হবে না।
মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাদের এক মাসের বেতন স্বেচ্ছায় অনুদান
হিসাবে এই প্রকল্পের জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও সচিব জানান।
‘ওয়াকফ বিশেষ বিধান আইন’
এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত একমাত্র
আইন ‘ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) বিশেষ বিধান আইন, ২০১২’- এর খসড়া ভূমি ও সমাজকল্যাণ
মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে আরো সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য ফেরত পাঠানো
হয়। এরপর তা আবারো মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
সচিব বলেন,
“ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য বর্তমানে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু এতে ভূমি হস্তান্তর ও উন্নয়নে তেমন কোনো স্বচ্ছ ব্যবস্থা নেই। তাই এসব সম্পত্তি কোনো কাজে লাগছে না। এ থেকে কোনো আয়ও হচ্ছে না।
“তাই ধর্ম মন্ত্রণালয় এ আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেছে। এতে ভূমি হস্তান্তর, আয় ও উন্নয়নের বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, হস্তান্তর ও উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ করবে।”
এছাড়া ২৯ থেকে ৩০ মে দোহায় অনুষ্ঠিত ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইসলামিক বিশ্ব
ফোরাম’ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর এবং ১৬ এপ্রিল লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ মন্ত্রিপর্যায়ের
বৈঠক এবং ১ থেকে ৩ জুন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাংরিলা সংলাপে’ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অংশ নেওয়ার বিষয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার
বৈঠকে অবহিত করা হয়।
সংবাদ: সংগ্রহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন