ঢাকা:
আপনারা কী শুনতে পাচ্ছেন?
আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি কারণ, আপনাদের সঙ্গে আমাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। আপনাদের সবাইকে এখানে আসার
জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সহমর্মিতার জন্য অজস্র ধন্যবাদ।
বুধবার রাতে এই দূতাবাসে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং
এই ভবনে পুলিশ অনুপ্রবেশ করাণোর চেষ্টা হয়েছিল। সেদিন মাঝরাতে আপনারা ঘর
থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং বিশ্বের দৃষ্টি আপনাদের সঙ্গে এই দূতাবাসের সামনে নিয়ে
এসেছিলেন।
দূতাবাসের ভেতরে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পর আমি
পুলিশের পায়ের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। তারা অভ্যন্তরীন অগ্নি-দূর্ঘটনার জন্য ব্যবহৃত রাস্তা ধরে ভেতরে ঢোকার চেষ্টায়
ছিল। কিন্তু আমি জানতাম, এরকম কিছু হলে ঘটনার
সাক্ষী থেকে যাবেই; আর সেই সাক্ষী আপনারা!
সেদিন রাতে যুক্তরাজ্য যে ভিয়েনা কনভেনশনকে ছুঁড়ে
ফেলে দেয়নি; তার একমাত্র কারণ, ঘটনার দিকে পুরো বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। আর বিশ্ব এখানে তাকিয়ে ছিল, কারণ আপনারা এখানে তাকিয়ে ছিলেন!
এরপরও আপনাদের যদি কেউ বলেন যে, আপনাদের এই রাতজাগার কোনো অর্থ হয় না; প্রিয় বন্ধুরা আমার,
তাকে স্রেফ মনে করিয়ে দেবেন কিভাবে আপনারা এই একুয়েডর
দূতাবাসের সামনে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে এইসব ঘটনা ঠেকিয়ে দিয়েছেন!
এবং আরও মনে করিয়ে দেবেন যে, কিভাবে পরের দিন নতুন এক সূর্যের আলো ভিন্ন এক দুনিয়ায় প্রবেল করেছিল। মনে করিয়ে দেবেন যে,
কিভাবে পরদিন সকালে লাতিন দেশগুলো ন্যায়বিচারের পক্ষে দারুণ
সাহসী ভূমিকা নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
আজ সেই সাহসী মানুষগুলোর জন্যও আমার পক্ষ থেকে
অনেক ধন্যবাদ। প্রেসিডেন্ট কুরিয়া (রাফায়েল ভিসেন্তে কুরিয়া দেলগাদো, একুয়েডরের প্রেসিডেন্ট) আমার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা বিবেচনা করে এবং পরে
মঞ্জুর করে যে সাহস দেখিয়েছেন; সে জন্য ধন্যবাদ।
একইরকম একুয়েডরের সরকার এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রিকার্দো পিন্তোকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। কারণ, তারা আমার
ব্যাপারটি বিবেচনা করে একুয়েডরের সংবিধান ও বৈশ্বিক মানবতার ব্যাপারে তাদের
দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছেন।
আমাকে সমর্থন দেওয়া এবং তাদের সংবিধানের পক্ষে
কাজ করে যাওয়ার জন্য একুয়েডরের জনগণকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই দূতাবাসের প্রত্যেক কর্মীর কাছে আমার
কৃতজ্ঞতার ঋণ অসীম। এদের অনেকেরই পরিবার-পরিজন লন্ডনে বসবাস করেন। তারা প্রতিনিয়ত নানারকম
হুমকি পাওয়ার পরও আমার প্রতি যে মমতা ও আতিথ্য দেখিয়েছেন; তা বলে শেষ করা যাবে না।
শুক্রবার এই লন্ডনে লাতিন আমেরিকার
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বিশেষ জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। আমি লাতিন আমেরিকার
দেশগুলি; আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, নিকারাগুয়া, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, পেরু, ভেনিজুয়েলা এবং আরও
সব রাষ্ট্রের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার রাজনৈতিক আশ্রয়কে সমর্থন জানানোর
জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ায় সরকার আমাকে সমর্থন করছে
না; কিন্তু দেশগুলির যেসব মানুষ সরকারী মনোভাব উপেক্ষা করে
আমাকে সমর্থন জানিয়ে আমাকে শক্তিশালী করছেন; তাদের অনেক ধন্যবাদ। এবং এসব সরকারের মধ্যে এখনও যে গুটিকয় বিবেচনাক্ষম লোক এখনও ন্যায় বিচারের
পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছেন; তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের দিন একদিন
আসবেই।
উইকিলিকসের সব কর্মী, সমর্থক এবং সূত্রকে ধন্যবাদ; যাদের কমিটমেন্ট আর
বিশ্বস্ততার কোনো তুলনা হয় না।
আমার পরিবার এবং আমার সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা;
যে সন্তানদের তাদের বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা
হয়েছে। আমরা খুব দ্রুত আবার একত্রিত হবো!
আজ উইকিলিকস যখন হুমকির মুখে; তার মানে বুঝতে হবে আমাদের এই সমাজের মুক্তবুদ্ধি এবং চিন্তার স্বাধীনতাও
হুমকির মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিপক্ষে এই আন্দোলনকে আমাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের পথ
হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
আমরা কি আবার একত্রিত হতে পারব? আমরা কি যে মতাদর্শ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম, সেই মতাদর্শ আরও শক্ত করে তুলে ধরতে পারব?
নাকি আমাদের মতাদর্শ পাথরে মাথা কুটে মরবে?
নাকি আমাদের সবাইকে ভয়ানক এক রূঢ় দুনিয়ায় টেনে নিয়ে যাবে!
যেখানে সব সাংবাদিক মামলার ভয়ে চুপ করে যাবে। যে দুনিয়ায় সব নাগরিককে
অন্ধকারে চিৎকার করে ফিরতে হবে!
আমি বলছি, আমরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
আমি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বলছি, সঠিক কাজটা করুন। উইকিলিকসের বিপক্ষে এই ডাইনি-হত্যাযজ্ঞ এখনই বন্ধ করুন।
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই আমাদের বিপক্ষে এফবিআই
তদন্ত বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই পরিষ্কার করে বলতে হবে যে, তারা আমাদের কর্মীদের এবং সমর্থকদের দণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সারা দুনিয়ার সাংবাদিকদের
সামনে কথা দিতে হবে যে, তারা ক্ষমতাধরের গোপন
অপরাধ উন্মোচন করতে সাংবাদিকদের আর বাধা দেবে না।
কোনো সংবাদ সংস্থার বিপক্ষে এই ধরনের নির্বোধের
মতো আইনি ব্যবস্থা আর নেওয়া চলবে না; সে উইকিলিকসই হোক,
আর নিউইয়র্ক টাইমসই হোক!
সমাজের প্রহরীদের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের এই লড়াই
অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
থমাস ডার্ক, উইলিয়াম বিনে, জন কিরাকৌ সহ যুক্তরাষ্ট্রের যেসব নায়োকোচিত
মাজের প্রহরীরা আছেন; তাদেরকে অবশ্যই, অবশ্যই মুক্ত করে দিতে হবে। অবশ্যই তারা জনগনের কর্মচারী হিসেবে যে কঠোর সময় পার করেছেন এবং যে দায়িত্ব
পালন করেছেন; সে জন্য যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এবং সেইসব সামরিক ব্যক্তি যাদের লিভেনওয়র্থ দূর্গ,
কানাসে বন্দী রাখা হয়েছে; তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কোয়ান্টিকো, ভার্জিনিয়াতে জাতিসংঘের তৈরি করা নির্যাতনের
কেন্দ্রগুলোতে যেসব বন্দী আছেন; যারা বন্দীত্বের দু বছর
পরও বিচারের মুখ দেখতে পারনি; তাদের অবশ্য অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।
ব্র্যাডলি ম্যানিংকে যে অপরাধে অপরাধী বলা হচ্ছে,
তা যদি সে সত্যিই করে তাকে; তাহলে সে একজন নায়ক! সে সত্যিই আজদের দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক
বন্দী। এই ব্র্যাডলি ম্যানিংকে অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।
বুধবার পর্যন্ত ব্র্যাডলি ম্যানিং বিচার ছাড়াই
৮১৫ দিন জেলে কাটিয়ে ফেলেছে! যেখানে এর সর্বোচ্চ সীমা ১২০ দিন।
বৃহস্পতিবার আমার বন্ধু নাবিল রজবকে একটি টুইট
করার অপরাধে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার রাশিয়ার একটি ব্যান্ডদলকে রাজনৈতিক
পারফরম্যান্স করার অপরাধে জেলে ঢুকানো হয়েছে।
আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন এইসব হিংস্রদের মধ্যে একটি
একাত্মতা আছে।
এখন আমাদের এই প্রতিবাদে অবশ্যই আরও একাত্ম এবং
আরও দৃঢ় হয়ে উঠতে হবে।
ধন্যবাদ।
অনুবাদ: দেবব্রত