পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

একসঙ্গে জন্মদিন এবং সামাজিক ব্যবসা দিবস পালন করলেন ডক্টর ইউনূস


গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশ কমতে কমতে তিন শতাংশে দাড়িয়েছেনতুন করে বিনিয়োগ না করলে সরকারের অংশ আরও কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নোবেলজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসসামাজিক ব্যবসা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনুস আবারও গ্রামীন ব্যাংককে নিয়ে গঠিত কমিশন নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা উল্লেখ; গ্রামীন ব্যাংক বাঁচিয়ে রাখতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন
শুধুই টাকা বানানো নয় বরং কল্যান আর জনমুখি কাজের অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে ব্যবসা; শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনুসের ভাষায় যার নাম সামাজিক ব্যবসাসমাজের উন্নয়নই হবে এই ব্যবসার মূলমন্ত্রমাইক্রোক্রেডিটের পর অধ্যাপক ইউনুসের এই নতুন চিন্তা এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে দাবী সামাজিক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরাএরই মধ্যে বিশ্বের ১৯ দেশে সামাজিক ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে বলেও দাবী তাদেরনিজের ৭২তম জন্মদিনের সঙ্গে সামাজিক ব্যবসায় আগ্রহী সেই দেশগুলোর অংশগ্রহনকারীদের সঙ্গে নিয়ে ডক্টর ইউনুস পালন করলেন তৃতীয় সামাজিক ব্যবসা দিবস
মার্ ন নভোচারী রন গারান বলেছেন; সামাজিক ব্যবসায় জোটবদ্ধরা অন্তত কোন রকম দূর্তি কিংবা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে। আর আমি সে কারণেই তাদের সঙ্গে আছি। এ কারণেই আমি সামাজিক ব্যবসায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মার্ন এই নভোচারী আরও বলেন; সামাজিক ব্যবসায় মনোনিবেশ করা মানুষ নিজের সঙ্গে মানুষ, সমাজেরও উন্নয়নে অংশীদিরিত্বের ভিত্তিকে কাজ করে। এ কারণেই ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের এই কনসেপ্টের সঙ্গে আমার একাত্মতা রয়েছে।
প্রচলিত ব্যবসার সঙ্গে সামাজিক ব্যবসার কোন বিরোধ নেই; অথচ প্রচলিত ব্যবসার মতো সামাজিক ব্যবসায়ীরা লভ্যাংশ নেবে না; অর্থ বানাতে মরিয়া হবে না; তাদের থাকবে সমাজের প্রতি কমিটমেন্ট; মোদ্দা কথা উদ্দেশ হবে কল্যানকরএনজিওর মতো দানমুখি কার্যক্রমের বদলে থাকবে অংশীদারিত্বের কর্মসূচীপ্রশ্নোত্তরে সামাজিক ব্যবসার এমনই ব্যখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনুস
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস বলেন,  সামাজিক ব্যবসায় যারা আসবেন তারা কেউ ব্যবসা থেকে নিজেদের মুনাফা খুঁজবেন না বরং মানুষের কল্যানে কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার নানা ধরনের হতে পারে। তবে মূল কাজ হবে, মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা। যা কিনা প্রচলিত ব্যবসার মধ্যে নেই। প্রচলিত ব্যবসায় মানুষ তাদের নিজেদের আখের গোছানোর কাজই কেবল করে থাকে। অথচ সামাজিক ব্যবসায় মানুষের উপকারে আসে এমন কাজ করা হবে; সেই সঙ্গে মানুষের অংশগ্রহণও থাকবে। তবে সেখান থেকে কেউ মুনাফা নেবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে এই নোবেল বিজয়ী কথা বলেছেন; গ্রামীন ব্যাংক প্রসঙ্গেওতিনি বলেন; গ্রামীন ব্যাংকের অধিকাংশ মালিকানা নারী সদস্যদের; সরকারের অংশ সামান্যইডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, নোবেল জয়ী প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। সে কারণেই যারা সাধারণ মানুষ তাদের উচিত হবে সরকারকে বোঝানো। তিনি আরও বলেন; গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ নারীদের প্রতিষ্ঠান; এখানে তাদের ৯৭ভাগ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ ভাগ সরকারের। কেননা শুরুতে সরকারের ২৫ ভাগ থাকলেও তারা নতুন করে কোন মুনাফা যোগ করেনি। অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতারা প্রতিনিয়ত শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকারের শেয়ার এক সময় আরও কমে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাবে।
ডক্টর ইউনূস বলেন; সামাজিক ব্যবসা মানুষের জন্য আর সে কারণেই এখানে যারা কাজ করবে তারা সরাসরি মানুষের উপকারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এর থেকে তারা বেতনও পাবে; যেভাবে অন্য দশটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পায়। তবে প্রতিষ্ঠান থেকে যে লাভ হবে তার কোন অংশ তারা নেবে না।
ডক্টর ইউনুস আরও বলেন; সরকার চাইলে সামাজিক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে পারে তবে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ না দেওয়াই ভালোতার মতে; সরকারকে ঢুকতে দিলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়তে পারে; উদ্দেশ ব্যহত হতে পারে
পান্থ রহমান

বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

চ্যানেল আইতে ড্যান ডাব্লিউ মজিনা







ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা চ্যানেল আই-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি দুই দেশের সম্পর্ক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা ছাড়াও ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ছবি: সংগ্রহ

বর্ষণে ২৭ জুন সন্ধ্যা পর্বিন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে নিহত ৯০


চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে অতি বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল, ধস ও বজ্রপাতে এখনও (২৭ জুন, সন্ধ্যা) পর্যন্ত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

এ মন্ত্রণালয়ের সচিব আসলাম আলম বুধবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, বেলা দেড়টা পর্যন্ত আমরা ৯০ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। উদ্ধার তপরতা চলছে। দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবক, ফায়ার ব্রিগেড ও সেনাবাহিনীর কর্মীরা উদ্ধার তপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন

বর্ষণজনিত দুর্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সচিব জানান, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দ্রুত এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আর বৃষ্টি না হলে সমস্যা হবে না।

আসলাম আলম বলেন, দুর্যোগের মধ্যে খাদ্য সংকট এড়াতে ওইসব এলাকায় ৫০ টন চাল ও ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রত্যেক জেলার জন্য দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনে জরুরিভাবে খাদ্য কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সচিব জানান।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনের বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে দুই হাজার ৪১৩ জন মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তাদের ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন: সংগ্রহ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন; তিন বছরে বিএসএফ ১৫১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে


বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ১৫১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন

জাতীয় সংসদে টেবিলে উপস্থাপিত বিএনপির অনুপস্থিত সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান

সাহারা বলেন, সীমান্ত এলাকায় নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা এবং আহত করার ব্যাপারে বিজিবি এবং বিএসএফ এর মধ্যে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে দুদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে ভারত হত্যা বন্ধে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে

হারুনুর রশিদের এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পহেলা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত গত প্রায় ৬ মাসে ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ এবং ২৭ জনকে আহত করেছে

তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত কোস্ট গার্ড এককভাবে এবং র‌্যাব ও পুলিশের সাথে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৮৪টি অবৈধ আগেয়াস্ত্র, ৫২৮ রাউন্ড তাজা গুলি, ১৮৯ জন জিম্মি জেলে, ৯১ জন বিপন্ন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে অপরদিকে ২৬১ জন জলদস্যুকে আটক করেছেএসকল অভিযানে ১৪টি আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে

সাহারা খাতুন বলেন, সাইবার অপরাধ দমন ও তদন্ত করার জন্য পুলিশ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং রংপুর বিভাগে স্কোয়াড কাজ করছে

মন্ত্রী সংসদকে জানান, পুলিশ অধ্যাদেশ পরীক্ষাধীন রয়েছে এদিকে পুলিশের আবাসন সংকট নিরসনে ১২টি মডেল থানা, ৫০টি জরাজীর্ণ থানা, ১০টি ব্যারাক ভবন, ৬০টি তদন্ত কেন্দ্র, ৫০টি আউট পোস্টসহ ৭টি র‌্যাব কমপ্লেক্স নির্মাণ করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে

মন্ত্রী সংসদে জানান, দেশের প্রতিটি উপজেলাতে একটি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপনের অংশ হিসেবে ১৫৬টি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে বিবেচনাধীন আছে একনেকে অনুমোদন পেলে স্থাপন কাজ শুরু হবে

বেগম শাহিন মনোয়ার হকের এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, পুলিশে ৭৩৩টি ক্যাডার পদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ৩০৬টি পদ অনুমোদন করা হয়েছে ৪২৭টি সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে

সারাদেশে মলম পার্টি দমনে র‌্যাব-পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ্ করে মন্ত্রী বলেন, অপরাধীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাক্ষণিক সাজা দেওয়ার ফলে অজ্ঞান পার্টি এবং মলম পার্টির দৌরাত্ম হ্রাস পেয়েছে

পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলে জানান মন্ত্রী তিনি বলেন, পুলিশ পরিদর্শকের পদ প্রথম শ্রেণি এবং উপ-পরিদর্শকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে

সংসদকে সাহারা খাতুন বলেন, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান ও ব্যবহার বন্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে

মাদকদ্রব্য বিক্রয়ে শিশু এবং নারীকে ব্যবহার বন্ধে কোনো আইন করার পরিকল্পনা আপাতত নেই বলে মন্ত্রী সংসদকে জানান
প্রতিবেদন: সংগ্রহ

শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সুপারিশ তৈরি করেছে ।।পররাষ্ট্রমন্ত্রী


জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সুপারিশ ও দিক নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

ডাক্তার দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিকদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশে নিবন্ধিত মিয়ানমারের শরণার্থীর সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার জন শরণার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারের নয়াপাড়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ২৬৬ জন, পরিবার সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে যা অনেক বেড়েছে।  ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের মধ্য দিয়ে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

ডাক্তার দীপু মনি বলেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ ও দিক নির্দেশনা প্রস্তুত করছে। জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ জোর কূটনৈতিক তপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ইস্যুটি বেশ পুরনো এবং বিভিন্ন ফোরামে আটকে পড়াদের দেশটিতে ফেরত নেওয়ার দাবি উঠে আসছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে তাদের অনীহা ও অসুবিধার কথা উল্লেখ করে আসছে। আটকে পড়াদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই সচেষ্ট রয়েছে।

দীপু মনি বলেন, ১৯৭১-পরবর্তী যেসব অবাঙালি উর্দুভাষী পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরতে সক্ষম হয়নি, পরে রেডক্রস পরিচালিত এক সমীক্ষায় তাদের পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তারাই আটকে পড়া পাকিস্তানি বলে পরিচিত। সে সময়ে পাকিস্তানে ফেরত যেতে ইচ্ছুক পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪১ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যারা বাংলাদেশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ  করেছে, পরে তাদের এখানে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তান সরকার এক লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জন আটকে পড়াকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। এরপর ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দেয় যে, তিনশ পরিবারকে পাকিস্তানে ফেরত নেওয়া হবে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মাত্র ৫০ পরিবারকে ফেরত নেওয়ার পর প্রক্রিয়াটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।

মন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও সন্তোষজনক কোনো সুরাহা হয়নি। আটকে পড়াদের সবাইকে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বাংলাদেশ বরাবরই পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে।

মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সালিশ নোটিশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির জন্য একটি আইনি কার্যক্রমের সূত্রপাত হয়। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এরই মধ্যে তার দাবি দাওয়ার লিখিত বক্তব্য মেমোরিয়াল ট্রাইব্যুনালে পেশ করেছে। আগামী ৩১ জুলাই ভারতের কাউন্টার মেমোরিয়াল ট্র্যাইব্যুনালের কাছে পেশ করার কথা রয়েছে। আরো এক দফা লিখিত বক্তব্য বাংলাদেশ পেশ করলে ভারতের সংশোধনী উপস্থাপনের পর মৌখিক শুনানি হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৪ সাল  নাগাদ সালিশের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ রায়ের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।

মোশতাক আহমদ রুহীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদের ভারত, নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, সিঙ্গাপুর, হংকং, ম্যাকাও, তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।
প্রতিবেদন: সংগ্রহ

শনিবার, ২৩ জুন, ২০১২

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী জার্মানি

সস্তা শ্রমিক নয়, সম্পূর্ন ব্যতিক্রমি কারনে জার্মানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কারনটি হচ্ছে কাঁচা মালের সহজলভ্যতা। দেশটির শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সফররত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারভেল অবশ্য বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনেরও তাগিদ দিয়েছেন।

নিজের দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে একবেলার ঝটিকা সফরে বাংলাদেশ এসেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারভেল। দুপুরে ঢাকায় পৌছেই সরাসরি চলে যান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায়। সেখানেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়েস্টারভেল। কথা বলেন; দুই দেশের সহযোগিতার নানা দিক নিয়ে। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান; সহযোগিতার নানা ক্ষেত্র ছাড়াও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়েও তাদের আলোচনা হয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ওয়েস্টারভেল বলেন, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আমাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ কিংবা জ্বালানী নেই; আমাদের শুধু মেধা আছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি বলেন, জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক অক্ষুন্ন থাকবে। যদিও দীপু মনি ইউরো-জোনের অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন; মনে হচ্ছে ইউরোপের এই মন্দাভাব সহজে কাটবে না। তবে এ কারণে জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোন প্রভাব পরবে না।

ইউরো জোনের অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে উল্টো বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ‘সফট লোন’ দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তা, সুশাসন ও আইন সংস্কারে জার্মান সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
গুইডো ওয়েস্টারভেল বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ২০০কোটি ডলার দিয়েছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা হিসেবে। সেই সহযোগিতার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া জ্বালানী খাতে সহযোগিতার জন্য আমরা ৬০ মিলিয়ন ডলার সফল লোন দেওয়ার বিষয়ে কমিট করেছি।

সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা খুন, হত্যা, নিখোঁজের মতো ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। বলেন; ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত জরুরী।
পান্থ রহমান

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

বাড়িভাড়া বাড়ছেই, চিড়েচ্যাপ্টা মানুষ


সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিসা ও বাসস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছেঅথচ জীবনযাপনের মৌলিক প্রতিটি অধিকার নিয়েই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে দেশের মানুষএর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাসস্থানের সমস্যাবাড়িভাড়া এখন যন্ত্রণার আরেক নাম
বেসরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক দেবাশীষ রায় বেতন পান সব মিলিয়ে আট হাজার টাকাপল্লবীর ডি ব্লকের ৯ নম্বর রোডের একটি ছোট্ট বাসায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া থাকেনহঠা করে বাড়িওয়ালা দুই হাজার টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দেনতিনি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেনএরপর তাঁর বাসায় সন্ত্রাসী হামলা হয়কেটে দেওয়া হয় বাসার বিদ্যু ও পানির লাইনএরপর দেবাশীষ রায় যান আদালতে
দেড় কোটি মানুষের এই শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে এ রকম জিম্মিদশা দিন দিন প্রকট হচ্ছেনতুন বছর শুরুই হয় ভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্ক দিয়েএ জন্য আদালত পর্যন্ত যান অল্প কিছু লোকবাড়তি ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া বাকিদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকে না
দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯১ সালের একটি পুরোনো আইন আছেআইনে বলা আছে, ভাড়াটের কাছে কোনো ধরনের জামানত বা কোনো টাকা দাবি করা যাবে নাঅগ্রিম হিসেবে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে নাপ্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধের রসিদ দিতে হবে
কিন্তু আইনকানুনের ধার ধারে না কেউআর আইন থেকেও নেইএকদিকে আইনটি উপযোগিতা হারিয়েছে, অন্যদিকে এর কোনো প্রয়োগও নেইভাড়াটেদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, সরকার বাড়িওয়ালাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বাড়িভাড়ার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১১) ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশআর ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশলাগামহীন এই বাড়িভাড়ায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত
ক্যাবের সভাপতি কাজী ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বাড়িভাড়াঢাকার মোট অধিবাসীর ৯০ শতাংশই ভাড়াটেকিন্তু সরকার ভাড়াটেদের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীনবাড়িভাড়া নিয়ে নামমাত্র যে আইন আছে, সেটি বাস্তবায়িত হয় নাকোন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেইএটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের করার কথাআর ঢাকা সিটি করপোরেশন সব বাড়ির হোল্ডিং কর নির্ধারণ করে দেয়কাজেই তাদেরই উচিত প্রতিটি বাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়াসিটি করপোরেশনের এমন একটি তালিকাও আছে, কিন্তু সেটিও মানা হয় না
ভাড়াটেদের সচেতন করতে ও অধিকার আদায় করতে গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটিসংগঠনের মহাসচিব কামরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সরকারই উদ্যোগ নেয়নিজাতীয় ভোক্তা অধিকার আইনেও বাড়িভাড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নিফলে বাড়িমালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন, বছর বছর ভাড়া বাড়াচ্ছেনতিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত আইনটিও যুগোপযোগী নয়সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে এই আইন সংস্কারের কথা আলোচনা হলেও এরপর আর কিছু হয়নি
ক্যাবের জরিপ: ক্যাবের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩২১ দশমিক ০৬ শতাংশজরিপে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার ছিল ২৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২১ দশমিক ৬৫, ১৯৯২ সালে ১৩ দশমিক ৪৩, ১৯৯৩ সালে ১২ দশমিক ১৬, ১৯৯৪ সালে ১৬ দশমিক ৪৪, ১৯৯৫ সালে ২২ দশমিক ৬১, ১৯৯৬ সালে ১৭ দশমিক ৮৬, ১৯৯৭ সালে ১৫ দশমিক ০৩, ১৯৯৮ সালে ১৪ দশমিক ০৯, ১৯৯৯ সালে ১৮ দশমিক ২৪, ২০০০ সালে ১৫ দশমিক ০৮, ২০০১ সালে ১৭ দশমিক ৪০, ২০০২ সালে ১৩ দশমিক ৪৯, ২০০৩ সালে ৮ দশমিক ৪০, ২০০৪ সালে ৯ দশমিক ৯৬, ২০০৫ সালে ৭ দশমিক ৮৯, ২০০৬ সালে ১৪ দশমিক ১৪, ২০০৭ সালে ২১ দশমিক ৪৮, ২০০৮ সালে ২১ দশমিক ০৭, ২০০৯ সালে ১৪ দশমিক ৮৫ এবং ২০১০ সালে ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ বাড়িভাড়া বেড়েছে
বাড়িওয়ালারা যা বলেন: বেশির ভাগ বাড়িওয়ালার একই কথানিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যু-জ্বালানির দাম বৃদ্ধিএসব কারণেই বাড়িভাড়া বাড়াতে হচ্ছে
ক্যাব বলছে, বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশই বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেনএ কারণে কোনো কিছুর দাম সামান্য বাড়লেই ভাড়া বাড়ান মালিকেরাক্যাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাড়া দিতে দেরি হলে রাজধানীর ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেনগৃহহীন মানুষের তুলনায় বাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াচ্ছেনবেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাড়াসংক্রান্ত চুক্তি হয় না বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের মধ্যেবেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়ার রসিদও দেন না
ধানমন্ডি ১৫ নম্বর রোডের একজন বাড়িওয়ালা গিয়াসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছুর দাম বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়বে না কেন? ভাড়াটের সঙ্গে চুক্তি করেন না কেন, জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের বাড়িওয়ালা গোলাম রায়হান বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাড়াটেরা চুক্তিপত্র জাল করে মালিকানা দাবি করে বসেনতাই অনেক মালিক ভয়ে চুক্তিপত্রের কথা ভাবেন না প্রতিবছর ভাড়া কেন বাড়ে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাড়া তো বাড়বেইসরকার তো কোনো আইন করেনি যে ভাড়া বাড়ানো যাবে না
ঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মাসুদ রানা বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়লে, তেলের দাম বাড়লে আমরা চিকার করিকিন্তু ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম বাড়িভাড়াঅথচ যখন-তখন ভাড়া বাড়ালেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না
বাড়িভাড়ার যন্ত্রণায় চরম ক্ষুব্ধ ধানমন্ডির বাসিন্দা বেসরকারি একটি সংস্থার ব্যবস্থাপক কাজী মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নগরের মানুষ সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় আছে বাড়িভাড়া নিয়েকিন্তু সরকার এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপআমার মনে হয়, এখন কোন এলাকায় কত বাড়িভাড়া হবে, সেটি নির্ধারণ করে তা মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো উচিত
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকেরা যা বলেন: বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা আছে, সরকার ভাড়া নির্ধারণসহ এ-সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিতে পারবেজানা গেছে, ঢাকায় এখন পাঁচ থেকে ছয়জন সহকারী জজকে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া আছেতবে সাধারণ মানুষ এটা জানে নাফলে নিয়ন্ত্রকদের আদালতে যাওয়ার সংখ্যাও হাতেগোনাতা ছাড়া দেড় কোটি মানুষের এই শহরে পাঁচ-ছয়জন নিয়ন্ত্রকের কী বা করার আছে
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক ও সহকারী জজ ফারজানা ইয়াসমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় ভাড়া নিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থাবছর বছর বাড়িভাড়া বাড়ছেএমনকি আমাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ছাড়ার পর এক লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে বাসায় উঠতে হয়েছেএ সমস্যার সুরাহা হওয়া প্রয়োজন
আরেকজন নিয়ন্ত্রক এ এফ এম মারুফ চৌধুরী বলেন, ভাড়াটের সঙ্গে বাড়িওয়ালার লিখিত চুক্তি করা আইনে বাধ্যতামূলককিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনে মৌখিকভাবে সব চলেফলে ভাড়াটে চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন নাআর ডিসিসির তালিকা অনুযায়ী, বাড়িওয়ালারা ভাড়া নিচ্ছেন কি না, সেটি তদারকের কোনো ব্যবস্থা নেইকাজেই শুধু ভাড়া ঠিক করে দিলে হবে না, এটি মানা হচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে

প্রশ্নবিদ্ধ বাড়িভাড়া আইন
দেড় কোটি মানুষের এই ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া দিন দিন বাড়ছেতদারকির কেউ নেইফলে আয়ের অধিকাংশই যায় বাড়িভাড়ায়বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন থাকলেও তা কার্যকর নেইডিসিসির তালিকাও মানছে না কেউভাড়াটের সঙ্গে চুক্তির নিয়ম ও দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম না থাকলেও হরহামেশাই তা হচ্ছেবাড়িওয়ালাদের ৮০% বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে চলেনকোনো কিছুর দাম বাড়লেই ভাড়া বাড়ান মালিকেরাপ্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছেন শরিফুল হাসান

কোনো ভাড়াটের কাছে জামানত বা কোনো টাকা দাবি করতে পারবেন না বাড়িওয়ালাএক মাসের বেশি অগ্রিম ভাড়া নেওয়া যাবে নাপ্রতি মাসে ভাড়া নেওয়ার রসিদ দিতে হবে, নইলে বাড়িওয়ালা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেনদুই বছর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো যাবে নাকেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন
ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় এমন আরও অনেক কথাই উল্লেখ আছে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনেশুধু ভাড়াটে নন, বাড়িওয়ালাদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও আছে এই আইনেতবে একটি বাসার ভাড়া কত হবে, সেটি নির্ধারণ করার বিষয়টি অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এই আইনে
১৯৯১ সালে সরকার আইনটি জারি করেদেশের কোথাও এ আইন পুরোপুরি কার্যকর নেইতা ছাড়া আইনটি যুগোপযোগীও নয়; বরং আইনে ভাড়া নির্ধারণের ধারাটি প্রশ্নবিদ্ধ
ঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী আবু কায়ছার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালের আইনে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেসবার মোটামুটি অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছেএ আইন অনুযায়ী, ভাড়াটে বাড়িতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তি করবেনভাড়া কত টাকা, কত বছর পর ভাড়া বাড়বেএসবই উল্লেখ থাকবে চুক্তিতেপ্রতি মাসে ভাড়ার রসিদ দিতে হবেবাড়িওয়ালা চুক্তি না করলে ভাড়াটে তাঁকে আইনি নোটিশ দিতে পারবেনহুট করে ভাড়া বাড়ানো হলে ভাড়াটে আদালতে যেতে পারবেনএর ফলে ভাড়া জমা হবে আদালতেকিন্তু সচেতনতা কিংবা সাহসের অভাবে ভাড়াটেরা আদালতে যান না
ভাড়া কত হবে?: বাড়িভাড়া আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা, এ আইনে বাড়িভাড়ার পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে মানসম্মত ভাড়া শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছেমানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের ১৫ শতাংশের বেশি হবে না
বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটির মহাসচিব কামরুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, আইনের এই ধারাটিই সবচেয়ে বড় সমস্যাকারণ, ১৯৯১ সালে আইনটি করার সময় একটি বাড়ি নির্মাণের খরচ বর্তমানের তুলনায় অনেক কম ছিলআবার তখন ফ্ল্যাটও সেভাবে ছিল নাফলে তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ শতাংশ ধরলে ঠিকই ছিলকিন্তু এখন একটি ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য যদি ৫০ লাখ টাকা হয়, তাহলে তার ১৫ শতাংশ আসবে সাড়ে সাত লাখ টাকা১২ দিয়ে ভাগ করলে প্রতি মাসে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাটের ভাড়া আসবে ৬২ হাজার ৫০০ টাকাএটি অবাস্তবকাজেই আইনের এই ধারাটি যুগোপযোগী করে এমন করতে হবে, যেন ভাড়াটে ও বাড়িওয়ালাদুজনই সেটি মানতে পারেনএ ছাড়া আরেকটি সমস্যা এই আইন না মানলে কী হবে, সেটি কোথাও পরিষ্কার করে বলা হয়নি
নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব: বাড়িভাড়া আইনের ৩-এর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার এই আইনের অধীনে কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকার জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ করতে পারবেননিয়ন্ত্রক বাড়ির মালিক বা ভাড়াটের দরখাস্তের ভিত্তিতে মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবেনজজ আদালতে এ ধরনের এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রক থাকলেও সাধারণ মানুষ তা জানে না
ভাড়া বৃদ্ধির ওপর বিধিনিষেধ: আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি বাড়ানো হলেও তা আদায়যোগ্য হবে নাধারা ৮-এ বলা আছে, বাড়ির মালিক বাড়িভাড়া দেওয়ার পরও নিজ খরচে বাড়িটির এমন কিছু উন্নয়নসাধন করেন অথবা আসবাব সরবরাহ করে থাকেন, যাকে বাড়ি মেরামত বলা যায় না, তবে বাড়ির উন্নয়ন বলা যায়এরূপ ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটে পরস্পর সম্মত হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করতে পারবেনএ ছাড়া বাড়ির পৌরকর, টোল ইত্যাদি বাড়লে ভাড়া বাড়তে পারে
ভাড়া আদায়ের রসিদ: আইনের ১৩-এর ১ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির মালিক ভাড়া পরিশোধের রসিদ দেবেনরসিদের একটি অংশ অবশ্যই বাড়ির মালিককে সংরক্ষণ করতে হবেঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়ার রসিদ দেন নাআইন অনুযায়ী এটি দণ্ডনীয় অপরাধ
সিটি করপোরেশনের তালিকা অবাস্তব: বাড়ির বাজারমূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪-এ স্পষ্ট করা আছেএটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন ঢাকা মহানগরকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে সম্ভাব্য বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেকিন্তু এতে ভাড়ার হার খুবই কম দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়যেমন, ধানমন্ডি এলাকায় মূল রাস্তার পাশে একটি বাসার ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৮ থেকে ১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছেসেই হিসাবে এক হাজার বর্গফুটের একটি বাসার ভাড়া হবে আট থেকে ১৩ হাজার টাকাতা ছাড়া সিটি করপোরেশনের এই তালিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছু জানেও না
অগ্রিম ভাড়া ও জামানত: আইনের ১০ নম্বর ধারায় বলা আছে, ভাড়া দেওয়ার সময় অতিরিক্ত সালামি, জামানত বা অনুরূপ কোনো টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন নাভাড়াটিয়া অধিকার সংরক্ষণ সোসাইটির মহাসচিব কামরুদ্দীন বলেন, এই আইন না মেনে ঢাকা শহরের অনেক বাড়িওয়ালা ৫০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নিচ্ছেন
নিয়ন্ত্রকেরা যা বলেন: ঢাকায় এখন মোট ১০ জন বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক রয়েছেনতাঁরা সবাই সহকারী জজতবে ঢাকার বেশির ভাগ ভাড়াটে আইন সম্পর্কে না জানার কারণে এই নিয়ন্ত্রকদের আদালতে যান নাঢাকার একজন বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান আইনে ভাড়ার হার নির্ধারণ থেকে শুরু করে অন্য সব সুবিধাই পাবেন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটেরাআইন অনুযায়ী, বাড়িওয়ালারা দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়াতে পারবেন নাদুই বছর পর ভাড়া বাড়ালেও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে ভাড়া বাড়াতে হবেকেউ সেটা না মানলে ভাড়াটের সেই ভাড়া মানসম্মত মনে না হলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন
আদালতে রিট: বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে গত বছরের ২৬ এপ্রিল জনস্বার্থে একটি রিট করেন বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি মনজিল মোরসেদরিট আবেদনের শুনানিতে আদালতকে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়ার তালিকা অনুসারে ভাড়া আদায়ে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে নাএই আইন অনুসারে বিধিমালা প্রণয়নের বিধান থাকলেও তা করা হয়নিফলে বাড়ির মালিকের বেআইনি কর্মকাণ্ডে ভাড়াটেরা অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন
২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল করা এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্টরিট আবেদনকারী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন এলাকার ভাড়া কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর হোকসেটাই রিট আবেদনে চাওয়া হয়েছে
পুরোনো আইন: বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি প্রথম জারি করা হয় ১৯৬৩ সালেপরের বছর বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা দেশ স্বাধীনের পরও ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলব ছিল১৯৮৬ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৬৩ সালের অধ্যাদেশটি বাতিল করা হয়এর মেয়াদ ছিল তিন বছর এবং তা ১৯৮৯ সালে শেষ হয়এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ জারি করেনএ আইনে কোনো মেয়াদের কথা উল্লেখ নেই

আইনের কোন ধারায় কী আছে
১৫.১ ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের ১৫ শতাংশের বেশি হবে নাএ হিসেবে একটি ফ্ল্যাটের দাম ৫০ লাখ টাকা হলে মাসিক ভাড়া হবে ৬২ হাজার ৫০০ টাকাকিন্তু এই টাকায় সহজে কেউ বাসাভাড়া নেবে না
১০ ধারায় বলা আছে, ভাড়া দেওয়ার সময় অতিরিক্ত সালামি, জামানত বা অনুরূপ কোনো টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন নাকিন্তু হরহামেশাই সেটি হচ্ছেএ ছাড়া অগ্রিম ভাড়া হিসেবে এক মাসের ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন নানিলে অর্থদণ্ড হবেআইন থাকলেও এটি দেখার কেউ নেই
৭ ধারা অনুযায়ী, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি নেওয়া যাবে নাবেশি নিলে আদালতে যাওয়া যাবেতবে মানসম্মত ভাড়া সহজে ঠিক করা যায় না
১৩.১ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির মালিক ভাড়া পরিশোধের রসিদ ভাড়াটেকে দেবেনরসিদের একটি অংশ অবশ্যই বাড়ির মালিককে সংরক্ষণ করতে হবে

ভাড়া বেড়েছে সব এলাকায়
বাড়িভাড়া বাড়ে এলাকাভেদেস্কুল আছে এমন এলাকায় বাসাভাড়া সব সময়ই বেশিভাড়া বাড়েও দ্রুতস্বল্প আয়ের মানুষ আগে একটু দূরে থাকতেনরেহাই পাচ্ছেন না তাঁরাও
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটেরা জানিয়েছেন, তিন বছর আগেও যে বাসার ভাড়া ছিল ছয় হাজার টাকা, সেটি এখন ১০ থেকে ১১ হাজার টাকাযে বাসা ছিল ১০ হাজার টাকা, সেটি এখন ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকাএই অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি সরকার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের একটি বাসার ভাড়াটে রিয়াজ রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করিআট হাজার টাকায় দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিলামএখন সেটির ভাড়া ১২ হাজারখাই বা না খাই, মাস শুরু হলেই বাড়িওয়ালাকে এই ১২ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হবেআমার আয়ের ৬০ শতাংশই চলে যায় বাড়িভাড়ায়
রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের ৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা সানজীদা শারমিন ১১ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় উঠেছিলেনএক বছর পর বাড়িওয়ালা সেটি ১২ হাজার করেনআরও এক বছর পর সেই বাসার ভাড়া এখন ১৪ হাজার টাকাবাসা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি
মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে এই এলাকায় বাড়িভাড়া দুই থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছেবিশেষ করে এই এলাকার রাস্তাগুলো সম্প্রতি ভালো হয়েছেআর এর পরই পাল্লা দিয়ে বাড়িভাড়া বাড়ছেস্কুল বেশি থাকায় এসব এলাকায় এমনিতেই ভাড়া বেশিভাড়া বাড়েও বেশি
রাজধানীর পল্লবীর বাসিন্দা তারাজুল ইসলাম বলেন, ‘নগরের স্বল্প আয়ের অনেকেই একটু কম ভাড়ায় একসময় মিরপুর ও পল্লবীতে থাকতে পারতেনকিন্তু মিরপুরেও এখন বাসাভাড়া বেড়েছেদুই বছর আগেও দুই কক্ষের একটি বাসায় আমি সাত হাজার টাকায় থাকতামকিন্তু এখন সেটি হয়ে গেছে ১০ হাজার টাকা
কাজীপাড়ার দক্ষিণ মনিপুর এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই এলাকায় বর্ষায় পানি জমে বলে ভাড়া একটু কম ছিলকিন্তু এখানেও বাসাবাড়া বেড়ে চলেছে
মিরপুর ও পল্লবী এলাকার ভাড়াটেরা জানিয়েছেন, এসব এলাকায় গত দেড় বছরে ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে
ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে থাকেন বহুজাতিক একটি কোম্পানির কর্মকর্তা রাশেদুল হাফিজউঠেছিলেন ২১ হাজার টাকায়, এক বছরে সেটি হয়েছে ২৫ হাজার টাকা
ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক বছরের ব্যবধানে এই এলাকায় বাড়িভাড়া তিন থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে
ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় গত এক বছরে চার থেকে সাত হাজার; রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী এবং আজিমপুর, লালবাগ, কোতোয়ালি এলাকায় এক থেকে তিন হাজার; বাসাবো, গোপীবাগ, খিলগাঁও ও সবুজবাগ এলাকায় ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িভাড়া বেড়েছে
বাড়িভাড়ার যন্ত্রণার সবচেয়ে করুণ শিকার হচ্ছেন তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক, বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিক ও নগরের নিম্নবিত্ত মানুষডিসিসির বস্তি উন্নয়ন বিভাগ জানিয়েছে, এঁদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যা নগরের মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশবছর দশেক আগে শ্রমিকেরা অনেকে মিলে আধা পাকা বাসায় থাকতে পারতেনএখন মিরপুর, বাসাবো, তালতলা ও শেওড়াপাড়া এলাকার একেবারে শেষ মাথার গলিতে দুই কক্ষের আধা পাকা টিনশেডের বাসাভাড়া পাঁচ হাজার, সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে


বেতনের সঙ্গে সংগতি নেই বাড়িভাড়ার
বাড়িভাড়া এখন বেতনের সঙ্গে প্রায় পুরোটাই সংগতিহীনবেতনের বড় অংশই চলে যায় বাড়িভাড়ায়অথচ বেতন যে হারে বাড়ে, বাড়িভাড়া বাড়ে তার চেয়েও বেশিএতে বাড়িভাড়ার সঙ্গে বেতনের অসংগতি কেবলই বাড়ছে
কামরুল ইসলাম অর্থনৈতিক ক্যাডারের একজন সরকারি কর্মকর্তাপ্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল বেতন স্কেল ১১ হাজারবাড়িভাড়া ঢাকার বাইরে মূল বেতনের ৪৫ শতাংশঢাকায় ন্যূনতম ৫৫ শতাংশঢাকায় আমরা সাড়ে ছয় হাজার টাকা বাসাভাড়া পাইএখন একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা এই টাকায় কীভাবে বাসাভাড়া পাবেন, কীভাবেই বা চলবেন?
বর্তমানে সরকারি বেতনকাঠামো অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তার মূল বেতন ১১ হাজার টাকাসব মিলিয়ে তিনি বেতন পান ১৮ হাজার টাকাপ্রভিডেন্ট ফান্ড কাটলে বেতন এক হাজার টাকা কমঅথচ দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া নিতে হলেও ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগেএ কথা জানিয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করার জন্যই সরকারের উচিত বাড়িভাড়ার লাগাম টেনে ধরা
জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ অনুযায়ী, স্বশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তার মূল বেতন পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত, তাঁরা বেতনের ৬৫ শতাংশ হারে ন্যূনতম দুই হাজার ৮০০ টাকা বাড়িভাড়া পানআর যাঁদের মূল বেতন পাঁচ হাজার এক টাকা থেকে ১০ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত, তাঁরা ন্যূনতম তিন হাজার ৩০০ টাকা বাড়িভাড়া পানযাঁদের মূল বেতন ১০ হাজার ৮০১ টাকা থেকে ২১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত, তাঁরা মূল বেতনের ৫৫ শতাংশ হারে ন্যূনতম ছয় হাজার ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া পানআর ২১ হাজার ৬০১ টাকার ঊর্ধ্বে যাঁদের বেতন, তাঁরা ৫০ শতাংশ হারে ন্যূনতম ১১ হাজার ৯০০ টাকা বাড়িভাড়া পানব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তারাও একইভাবে বেতন পান
এই বেতনকাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সর্বোচ্চ বেতনধারী কর্মকর্তারা ১২ হাজার টাকার মতো বাড়িভাড়া পাননাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি যে বেতনকাঠামো, সেই টাকা দিয়ে কোনোভাবেই একজন সরকারি কর্মকর্তার ঢাকায় থাকা সম্ভব নয়বিষয়টি রীতিমতো হাস্যকর
ঢাকা ভাড়াটিয়া উন্নয়ন সোসাইটির মহাসচিব মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের এই বেতনকাঠামো বিশ্লেষণ করলে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশে দুর্নীতির একটি বড় কারণ রাজধানীর অতিরিক্ত বাসাভাড়াসরকারি একজন কর্মকর্তা যে বেতন পান, তাঁর পক্ষে সেই টাকা দিয়ে একটি মোটামুটি মানের বাসা নিয়ে সভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব নয়কাজেই সরকারের উচিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করা
কেবল সরকারি কর্মকর্তাই নন, নির্ধারিত আয়ের সব চাকরিজীবীর একই সমস্যাআয়ের বড় অংশই তাঁদের চলে যাচ্ছে বাসাভাড়ায়
বেসরকারি একটি ব্যাংকে কাজ করেন রাইসুল ইসলামতিনি সব মিলিয়ে বেতন পান ৩০ হাজার টাকাএর মধ্যে বাড়িভাড়া পান ছয় হাজার টাকাঅথচ তাঁকে থাকতে হচ্ছে ১৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েতিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, ঢাকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমরা অনেক ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম
যাঁরা সমাজের দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখেন, সেই সাংবাদিকদের বাড়িভাড়ার অবস্থাও করুণসর্বশেষ সপ্তম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের কাঠামো অনুযায়ী, একজন সাংবাদিকের ন্যূনতম বেতন ১৮ হাজার টাকাবাড়িভাড়া হিসেবে পান পাঁচ হাজার টাকাএই টাকায় ঢাকা শহরের কোথাও বাসাভাড়া পাওয়া অসম্ভব
বেসরকারি সংস্থা নাগরিক সংহতির এক জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানীর নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ৫৭ শতাংশ মানুষকে আয়ের অর্ধেক খরচ করতে হচ্ছে বাড়িভাড়ার পেছনে
প্রতিবেদন: সংগ্রহ/প্র.আ