পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১২

বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন


জাতীয় সংসদের স্পিকার সম্পর্কে সম্প্রতি কিছু মন্তব্য করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীবিচারপতির মন্তব্য সম্পর্কে গতকাল সোমবার সংসদে দেওয়া রুলিংয়ে স্পিকার এ কথা বলেন
স্পিকার আবদুল হামিদ আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধান বিচারপতি ভেবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেনএকই সঙ্গে স্পিকার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের জন্য সাংসদদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একজন বিচারকের অশোভন আচরণ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে ব্যাহত করতে পারে না
৫ জুন জাতীয় সংসদের স্পিকারকে উদ্দেশ করে হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী কিছু মন্তব্য করেছিলেনএকই দিন সংসদে কয়েকজন সাংসদ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ওই বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানানএর ১৩ দিনের মাথায় গতকাল সোমবার স্পিকার রুলিং দিলেন
গত রাতে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ ও সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রের দুটি সাংবিধানিক স্তম্ভআমি মনে করি, মাননীয় স্পিকার সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই দুটি সাংবিধানিক স্তম্ভের মধ্যে যেন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধ সৃষ্টি না হয়, সেটা বিবেচনায় রেখে রুলিং দিয়েছেনওই বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্পিকার বিষয়টি ভেবে প্রধান বিচারপতির বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেনব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে স্পিকার পরিমিত ভাষায় সংসদের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছেনসংবিধান নিয়ে যে একটা জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছিল, স্পিকার তার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে সক্ষম হয়েছেন
স্পিকার রুলিংয়ে বলেন, ‘২৯ মে সংসদে আমার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ৫ জুন হাইকোর্টের একজন মাননীয় বিচারপতি সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে সংসদ সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা কোনো বিবেকবান মানুষ উচ্চারণ করতে পারেন কি না, আমার সন্দেহ আছেরাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উত্থাপনের আগে রাষ্ট্রদ্রোহ কী, কোন কাজ রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে, রাষ্ট্রদ্রোহের বিষয়টি কে নির্ধারণ করতে পারেনএসব বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করলে বিজ্ঞ বিচারপতি বিজ্ঞতার পরিচয় দিতেন
স্পিকারের এ রুলিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনকক্ষে ছিলেন না
স্পিকার আবদুল হামিদ বলেন, ‘আদালতের এ ধরনের আচরণে কী করণীয় থাকতে পারে, প্রধান বিচারপতি সে বিষয়টি ভেবে যে ব্যবস্থা নেবেন, তাতে আমাদের সমর্থন থাকবেএর ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হয়তো সম্ভব হবে
গত ২৯ মে সড়ক ভবন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে সংসদে সাধারণ আলোচনা হয়সেদিন স্পিকার এবং সাংসদেরা এ বিষয়ে তাঁদের মতামত দেনএর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মে হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী স্পিকারকে উদ্দেশ করে কিছু মন্তব্য করেন
গতকাল অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপনের পরপরই স্পিকার এই রুলিং দেনসাংসদদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘২৯ মে এ সংসদে কয়েকজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি কিছু কথা বলেছিলামআমার বক্তব্যের বিষয় ছিল মূলত সংসদ, আদালত ও নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং তাদের কল্যাণ সাধনসংসদ সদস্যদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই তাক্ষণিক কিছু সাধারণ মন্তব্য করা হয়েছিলএরপর ৫ জুন অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশিত হয়, একজন মাননীয় বিচারপতি আমার বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন এবং আমার ও জাতীয় সংসদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেছেন
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন স্পিকারবলেন, ‘কিছুদিন আগে বরেণ্য শিক্ষাবিদ আবদুল্ল্লাহ আবু সায়ীদের বিষয়ে সংসদে কিছু আলোচনা হয়েছিলযখনই সংসদের কাছে তাঁর বক্তব্য সম্পর্কিত সঠিক ব্যাখ্যা গোচরীভূত হয়, তখনই সংসদ এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেছেঅপ্রয়োজনীয় অংশ এক্সপাঞ্জ করেছেআমাদের প্রত্যাশা ছিল, মাননীয় বিচারপতি বিষয়টি হূদয়ঙ্গম করবেন এবং তাঁর মাত্রা অতিক্রম করা বক্তব্য পরিহার করবেনকিন্তু তিনি তা করেননি
আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘আদালতে বিচারকের মন্তব্যের সূত্র ধরে অনেকেই, বিশেষ করে, পত্রপত্রিকাগুলো সংসদ এবং বিচার বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেআসলে সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে কোনো বৈরী ভাব নেইএটি সংসদ সম্পর্কে একজন বিচারপতির কিছু অসৌজন্যমূলক মন্তব্য এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ-প্রসূত উক্তিপুরো বিচার বিভাগকে এর সঙ্গে জড়ানো ঠিক হবে না
পরিশেষে সাংসদদের দাবি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে স্পিকার বলেন, ৫ জুন সাংসদেরা ক্ষোভ প্রকাশের একপর্যায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানিয়েছিলেনএ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেনএই প্রস্তাবকে সমর্থন করে স্পিকার বলেন, ‘বিনীতভাবে বলতে চাই, একজন বিচারকের অশোভন আচরণ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে ব্যাহত করতে পারে নাসার্বিক বিবেচনায় এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন হবে বলে মনে করি না
ক্ষমতাসীন মহাজোটের সাংসদ রাশেদ খান মেনন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্পিকারের রুলিংয়ে আমরা সন্তুষ্টরাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য রাখার জন্য এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল নাকারণ, বিষয়টি একজন বিচারপতিকে কেন্দ্র করে, পুরো বিচার বিভাগ নিয়ে নয়
প্রতিবেদন: সংগ্রহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন