জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে
বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সুপারিশ ও
দিক নির্দেশনা প্রস্তুত করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে
উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মুহিবুর রহমান মানিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা
জানান।
ডাক্তার দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের
নাগরিকদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশে
নিবন্ধিত মিয়ানমারের শরণার্থীর সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার
জন শরণার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে কক্সবাজারের নয়াপাড়া ও
কুতুপালং ক্যাম্পে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ২৬৬ জন, পরিবার সম্প্রসারণের ফলে বর্তমানে যা
অনেক বেড়েছে।
২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর
মিয়ানমার সফরের মধ্য দিয়ে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ডাক্তার দীপু মনি বলেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার
ব্যাপারে সুপারিশ ও দিক নির্দেশনা প্রস্তুত করছে। জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে
এ বিষয়ে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ
জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
হাবিবুর রহমান মোল্লার
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ইস্যুটি বেশ পুরনো এবং
বিভিন্ন ফোরামে আটকে পড়াদের দেশটিতে ফেরত নেওয়ার দাবি উঠে আসছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ
বিষয়ে তাদের অনীহা ও অসুবিধার কথা উল্লেখ করে আসছে। আটকে পড়াদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর
বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বরাবরই সচেষ্ট রয়েছে।
দীপু মনি বলেন, ১৯৭১-পরবর্তী যেসব অবাঙালি উর্দুভাষী
পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরতে সক্ষম হয়নি, পরে রেডক্রস পরিচালিত এক সমীক্ষায় তাদের পাকিস্তানে
ফেরত যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, তারাই আটকে পড়া পাকিস্তানি বলে পরিচিত। সে সময়ে পাকিস্তানে ফেরত যেতে ইচ্ছুক
পাঁচ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪১ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যারা বাংলাদেশে থাকার
ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, পরে তাদের এখানে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এরপর পাকিস্তান সরকার এক
লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জন আটকে পড়াকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। এরপর ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার
ঘোষণা দেয় যে, তিনশ পরিবারকে পাকিস্তানে ফেরত নেওয়া হবে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মাত্র ৫০
পরিবারকে ফেরত নেওয়ার পর প্রক্রিয়াটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
মন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি
উত্থাপন করা হলেও সন্তোষজনক কোনো সুরাহা হয়নি। আটকে পড়াদের সবাইকে ফেরত পাঠাতে
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বাংলাদেশ বরাবরই পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সালিশ নোটিশ
জারির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির জন্য একটি আইনি
কার্যক্রমের সূত্রপাত হয়। জাতিসংঘ সমুদ্র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এরই মধ্যে তার দাবি
দাওয়ার লিখিত বক্তব্য মেমোরিয়াল ট্রাইব্যুনালে পেশ করেছে। আগামী ৩১ জুলাই ভারতের
কাউন্টার মেমোরিয়াল ট্র্যাইব্যুনালের কাছে পেশ করার কথা রয়েছে। আরো এক দফা লিখিত বক্তব্য
বাংলাদেশ পেশ করলে ভারতের সংশোধনী উপস্থাপনের পর মৌখিক শুনানি হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৪ সাল নাগাদ সালিশের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এ রায়ের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে
আমাদের সমুদ্রসীমা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।
মোশতাক আহমদ রুহীর
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তিদের ভারত, নেপাল, ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, সিঙ্গাপুর, হংকং, ম্যাকাও, তুরস্ক, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মিয়ানমারে যাওয়ার
জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।
প্রতিবেদন: সংগ্রহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন