পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১২

জেনারেল জ্যাকবের মুক্তিযুদ্ধ স্মরণ

স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল জ্যাকবের মতে, মুক্তিযোদ্ধারা সাহস না দেখালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতো না। চ্যানেল আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারত শুধু সহযোগিতা করেছে মাত্র। আসল কাজটা ছিলো বাঙালীদেরই। ১৬ই ডিসেম্বর বাংলার মানুষের সামনে পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ করার দিনটির বর্ণনা করেন জেনারেল জ্যাকব।
ডিসেম্বর ১৯৭১। পূর্ব পাকিস্তানে তখনও আক্রমন চলছে হানাদার, পশ্চিম পাকিস্তানীদের। আক্রমন ঠেকাতে বাঙালীদের আত্মবিসর্জন চলছেই। বন্ধুর মতো পাশে দাড়ানো মিত্রবাহিনীও লড়ে চলেছে সমান তালে। গুলি আসছে। যাচ্ছে পাল্টা জবাব।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। হঠাৎ বদলে গেলো যুদ্ধের চেহারা। গোলাগুলির বদলে শুরু হলো কূটনৈতিক যুদ্ধ। সেখানেও বাঙালীদের পাশে যথারীতি মিত্রবাহিনী। কূটনীতির সেই ত্রিমুখি আলোচনায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ছিলো বিশ্বের পরাশক্তিদেরও। পক্ষে-বিপক্ষে ছিলো নানা যুক্তি। কিন্তু সব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে একটি শব্দ ‘আত্মসমর্পণ’।
৭১-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ লে. জে. (অব:) জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব বলেন, আমি নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের কাগজ নিয়ে যাই কিন্তু সে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠে, তোমাকে কে বলেছে যে আমি আত্মসমর্পণ করবো? আমি পতুত্তরে জানাই, তুমি আত্ম সমর্পণ না করলে তোমার পরিবারের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। আর করলে তাদের দায়িত্ব আমার। তুমি যদি আত্মসমর্পণ না কর তাহলে আমি রক্ত দিয়ে হলেও আমার হাত ধুয়ে নেবো।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় সেদিন পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করলেও পরে অভিযোগ ওঠে ... ওটা ভারতের কূটনীতি নয় ছিলো কূটচাল। পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্ব অভিযোগ করে, জেনারেল জ্যাকব তাদের ‘ব্ল্যাকমেইল’ করেছিলেন। জ্যাকব হাসেন, যেন বলতে চাইলেন ... এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়্যার; আমি নিয়াজিকে কোন রকম শর্ত ছাড়া জনসম্মুখে আত্মসমর্পণ করতে বলি। ওর রাজি না হওয়ার কোন কারণ ছিলো না। আমি তাকে গার্ড অফ অনারও দিতে বলি। অবশেষে সেই ঘটনা ঘটে। আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। লে. জে. (অব:) জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বাধীনতার ডাক বাঙালীদের জন্যে টনিক। বলেন, বাঙালীরা ছিলো, স্বাধীনতা পাগল, সাহসী, দূর্নিবার।
লে. জে. (অব:) জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব, তাকে সম্মান জানানোয় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, চার দশকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে এবং যাবে আরও বহুদূর।
পান্থ রহমান

বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১২

এবার মহাকাশ কক্ষপথে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’

তিন বছরের মধ্যে মহাকাশে স্থাপিত হবে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট ... ‘বঙ্গবন্ধু-১’। নিজস্ব এই স্যাটেলাইট স্থাপনার জন্য আজ মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসপিআই-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বিটিআরসি। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল রূপ দেওয়ার লক্ষ পূরণেই সরকারের এই উদ্যোগ।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ১৯৫৭। সোভিয়েত তখনও অক্ষত। অর্থ, সম্পদ আর প্রযু্িক্ততে মহা শক্তিধর। নিজেদের প্রযুক্তিগত শক্তিকে প্রতিপক্ষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই মহাকাশে স্থাপন করে ‘স্পুটনিক-ওয়ান’ নামের স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ।
স্পুটনিক ছিলো মানুষের তৈরি প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। এর আগে চাঁদকেই পৃথিবীর চারপাশে একমাত্র উপগ্রহ হিসেবে জেনেছে মানুষ। কিন্তু স্পুটনিকের পর সেই সংখ্যা এখন হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের মাত্র দশটি দেশ নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারলেও পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে ৫০ দেশের উপগ্রহ। এর মধ্যে উপমহাদেশের ভারত আর পাকিস্তানেরও আছে নিজস্ব উপগ্রহ। এবারে সেই তালিকায় যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের নাম।
২০০৯ সালে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক বিচার-বিশ্লেষণের পর বৃহস্পতিবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী সহযোগি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেলো বাংলাদেশের।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল রূপ দিতে এই স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ আমাদের দারুণভাবে সহযোগিতা করবে। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের আগ্রহই প্রমান করে যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে বদ্ধ পরিকর। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু যোগ করেন, বাংলাদেশের এখন অনেক দূরের পথ হাটতে হবে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ, এর ভেতর থেকেই এগিয়ে যেতে হবে।
টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট এবং ব্রডকাষ্ট উন্নয়নে এই স্যাটেলাইট দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ এবং নীতি নির্ধারকরা।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মে. জে. (অবঃ) জিয়া আহমেদ তার সূচনা বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রায় তিন কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই সংখ্যা এবং ইন্টারনেটের মান বাড়াতে উপগ্রহটি সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে চায়। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের পথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গে থাকবে বলেও আস্বস্থ্য করেন তিনি।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চলা দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ ব্যবহার করতে পারবে। তাতে খরচও কমবে।
পান্থ রহমান

বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বন্ধু লেয়ার লেভিনের স্মৃতিচারণ

মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে নিজের করা স্থির আর চলচ্চিত্র দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন অসহায় বাংলাদেশিদের জন্য। বিভিন্ন শিবির ঘুড়ে শরনার্থীদের পাশে দাড়িয়েছিলেন এই মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ... লেয়ার লেভিন মুক্তিকামী বাংলাদেশিদের বন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের আমন্ত্রনে ঢাকায় এসেছিলেন সম্মাননা নিতে। চ্যানেল আই-এর সঙ্গে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, চার দশকে বাংলাদেশের উন্নতি চোখে লাগার মতো।
১৯৭১ ... চারদিকে ডামাডোল। গুলির আওয়াজ। গুপ্ত হত্যা। অত্যাচার, নির্যাতন। ভয়, আতঙ্কে ... ভিটেমাটি ছাড়ছে মানুষ। ছুটছে দিকবিদিক।
দুদিন আগেও যে মানুষগুলোর গোছানো ঘর ছিলো, তারাই আজ ঘর ছাড়া। আশ্রয়হীন। যাদের গোলাভরা ধান ছিলো তারাই খেতে পাচ্ছে না। অনাহারে আছে কোলের শিশুটিও।
আসলেই কী স্বাধীনতা যুদ্ধ নাকি পাকিস্তান ভাঙার পায়তারা? বিদেশি বন্ধুরা হাত বাড়াতে বাড়াতে ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সন্দেহ কাটছে না, ধন্দে আছেন তখনও। কিন্তু কেউ কেউ দ্বিধাহীন। তাদের মতে, দ্বন্দ্ব যাই হোক ... মানুষ তো, মানুষই। তাদেরই একজন এই মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেয়ার লেভিন। নিজের করা চলচ্চিত্র দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন লেভিন। শরনার্থী শিবিরে গিয়ে বাড়ালেন সহযোগিতার হাত।
সে সময়, মুক্তির ওই যুদ্ধে হাজারো মৃত মানুষকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছি। দেখেছি অনেককে মৃত্যুর প্রহর গুনতে। ওই দৃশ্যগুলো আসলেই অনেক কষ্টের। বুঝতে দেরী হয়নি, এই মানুষগুলোর জন্য আমার কিছু করা দরকার। বিশ্বকে জানানো দরকার, এখানে আসলে কী ঘটছে!
মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধে পাকিস্তানীদের বর্বরতার ছবি তুলতে গিয়ে গ্রেফতারও হয়েছে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারপরও দমে যাননি মানুষটি। বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের এ প্রান্তের মানুষগুলো এখন অসহায়।
আমার স্ত্রী তখন সন্তান সম্ভবা। যে কারণে সে আমার সঙ্গে আসতে পারেনি। আমার ছেলেটার বয়স এখন ৪০। আমি আমার ছেলেকে জন্মাতে দেখেছি, যেমন দেখেছি বাংলাদেশ জন্ম নিতে। আর তাই, আমি আমার ছেলের মতো বাংলাদেশের জন্যও সাফল্য কামনা করি। ... আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি তোমাদের দেওয়া এই সম্মানে।
বাংলাদেশ আর এদেশের মানুষে মুগ্ধ ছিলেন লেয়ার লেভিন। এখনও তাই। আর তাই চার দশক পরও লেয়ার লেভিনের সেই মুগ্ধতাভরা প্রশ্ন, এখনও কী হেমন্তের বাসাতে দোলে গাঁয়ের কিশোরীর শাড়ির আঁচল?
আমি আমার চলচ্চিত্রে, বাংলাদেশের রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করছিলাম। দেখাতে চেয়েছিলাম, কতটা প্রশান্তি নিয়ে একজন কৃষক মাঠে কাজ করে। কিভাবে ঢেউয়ের তালে তালে দুলে চলে নৌকা। বিকেলের মিষ্টি হাওয়ায় কিভাবে ললনার শাড়ির আঁচল উড়ে যায়, বাতাসের তালে তালে।
চার দশক পর হলেও বিদেশি সেই বন্ধুদের সম্মাননা জানিয়েছে বাংলাদেশ। লেয়ার লেভিন জানালেন, তিনি কৃতজ্ঞ। বললেন, তোমাকে অভিভাদন হে বাংলাদেশ।
পান্থ রহমান

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১২

এ বছর যারা পদক পেলেন

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে তথাকথিত আগরতলা ষডযন্ত্র মামলায় দুই নম্বর আসামি এবং ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (মরণোত্তর); বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সিরাজগঞ্জে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংগঠক এবং ১৯ মে ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে নিহত সিরাজগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক শহীদ আবুল কালাম শামসুদ্দিন (মরণোত্তর)।
ছাত্রী অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই চাঁদপুরে মুক্তিবাহিনীর চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনকারী এবং নির্যাতিত মহিলাদের সেবা প্রদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা  ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী; জন্ম আমার ধন্য হল মা গো- এর মতো বহু গণজাগরণমূলক গানের গীতিকার এবং ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তাবহনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ীম গহর।
চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে বিশিষ্ট চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত; শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিসেবী ও খ্যাতনামা নজরুল গবেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাহিত্যক্ষেত্রে বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আবুল ফজল (মরণোত্তর); গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে দেশের অগ্রণী কৃষিবিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ও দীর্ঘকাল দৈনিক সংবাদ-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মরহুম বজলুর রহমান (মরণোত্তর) এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট পদার্থবিদ ড. কামরুল হায়দার।
মনোনীত ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়া মরণোত্তর পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যরা তা গ্রহণ করেন।
ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, নয়ীম গহর, প্রাণ গোপাল দত্ত, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, কাজী এম বদরুদ্দোজা এবং কামরুল হায়দার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেন।
মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে তার স্ত্রী কোহিনূর মোয়াজ্জেম, শহীদ আবুল কালাম শামসুদ্দিনের পক্ষে তার ছেলে আবুল কালাম সালাউদ্দিন, আবুল ফজলের পক্ষে তার মেয়ে মমতাজ জানাহ, বজলুর রহমানের পক্ষে তার স্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই পুরস্কার নেন।
২০১২ সালে যারা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন তাদের প্রত্যেকে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি মেডেল, দুই লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা পত্র দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেইন ভূইঞা।
বাংলাদেশ সময় : ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১২

বাংলাদেশের বন্ধুরা ঢাকায়

৭১‘এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের নৃসংসতাই বাংলাদেশের পক্ষে দাড় করিয়ে দিয়েছিলো বিদেশি বন্ধুদের। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এমনই বলেছেন, সম্মাননা নিতে আসা বাংলাদেশের সুহৃদরা। রেবাবার সকালে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তারা।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যখন বাংলাদেশে চলছে পাকিস্তানী হানাদারদের ভয়াল আক্রমন। ঠিক সে সময় নানা কারণে বাংলাদেশে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, এনজিও কর্মী, আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তারা দেখেন পাকিস্তানী বর্বরতা। কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করেন তারা। সাধ আর সাধ্য অনুযায়ি পাশে দাড়ালেন বাংলাদেশের। চোখের সামনেই পাকিস্তানের বর্বরচিত আচরণ আর নির্মমতা প্রত্যক্ষ করা এই মানুষগুলোকে ‘ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ’ নামে ডাকছে স্বাধীন বাংলাদেশ। সম্মাননা নিতে আসা সেই সব বন্ধুরা সকালে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর সেই সব বন্ধুরা আবার ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। চার দশকে মাঝ বয়সী এই দেশটাকে দেখে অভিভূত তারা। আরও অভিভূত তাদেরকে সম্মান জানানোর এই উদ্যোগে।
সে সময়ের ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক সায়মন ড্রিং বলেন, এভাবে এ দেশে ফিরে আসাটা আনন্দের। আমি অভিভূত।
ভারতের লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের সম্মান জানানো হচ্ছে তাতে আমি যার পর নাই আনন্দিত। আমি সত্যিই আনন্দিত যে বাংলাদেশ আমাদের মনে রেখেছে।
তাদের মতে ৪০ বছরে এ দেশ এগিয়েছে অনেক। আর তরুনরা দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখছে । তাদের আশা আগামীতেও তরুনদের হাত ধরেই সামনে এগিয়ে যাবে এই দেশ... এই সোনার বাংলাদেশ।
ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং তার জবানীতে বলেছেন, আমরা দেখেছিলাম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী কিভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। কিভাবে অত্যাচার করেছে। আমাদের সহ্য হয়নি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি সহযোগিতা করার।
লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব একাত্তরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে, বাংলাদেশে পাকিস্তানীদের বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ওরা নিষ্ঠুরতা করেছিলো।
ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে এই সম্মানিত বিদেশি নাগরিকরা যান নৌ ভ্রমনে। যেখানেই দুপুরের খাওয়া শেষে বিকেলে ঢাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যান এই বিদেশিরা। পরে সেখান থেকে শিখা চিরন্তনের সামনে স্মরণ করেন ১৯৭১-এর শহীদদের।
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত করবেন মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সে সব বীর বন্ধুদের।
পান্থ রহমান

শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১২

সম্মাননা পাবেন ‘ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি সহযোগিতাকারীদের সন্মাননা দেওয়া হবে আগামী ২৭ মার্চ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে কাজ করা এই বন্ধুদের দেওয়া হবে বিশেষ নিরাপত্তাও। সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল তাজুল ইসলাম। তারা জানান, ১৩২ জন বিদেশীকে সন্মাননার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে এসে পৌছেছেন অনেকে।
‘ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ’ ... ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে সব বিদেশি নাগরিক সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়েও বাংলাদেশের পাশে দাড়িয়েছিলেন, তাদেরই ডাকা হয় এই নামে। মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে মুক্তিবাহিনীরা যখন সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত তখন সাতকোটি অসহায় বাংলাদেশিদের পাশে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেলেন এইসব মহান মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেনে জানানো হয়, সহযোগিতাকারী ওই বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, সাংবাদিক, এনজিওকর্মীসহ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের সম্মানিত করবেন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে যারা বাংলাদেশ এবং এদেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে প্রায় পৌনে একশ জন সম্মাননা নিতে আসা নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি বলেছেন, এরই মধ্যে ৭৫ জন আমাদের কাছে নিশ্চিত করেছেন যে তারা সম্মাননা নিতে ঢাকা আসছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অবঃ) তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সেই সব সুহৃদদের মধ্যে এরই মধ্যে পৌছে গেছেন বেশ ক’জন।
যুদ্ধকালিন সময়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতাকারী ও সেই সময়ের মার্কিন সিনেটর সিনিয়র স্যাক্সবি’র ছেলে উইলিয়াম বি. স্যাক্সবি জুনিয়র জানান, তারা আপ্লুত যে তার পিতাকে স্মরণ করেছে বাংলাদেশ। দুই বছর আগে তার বাবা মারা যাওয়ায় তিনি তার পিতার সম্মাননা নিতে এসেছেন। সঙ্গে এসেছে তার ছেলেও।
চ্যানেল আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুনিয়র স্যাক্সবি শোনালেন, বাবার মুখে শোনা বাংলাদেশের গল্প। বললেন, আমাদের জন্য তিনি গর্বের। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে এতটা সম্মানের জানার পর দারুণ লেগেছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য গত বছর ২৫ জুলাই ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ দেওয়া হয়। তিন ধরনের সম্মাননার মধ্যে বাকিদের দেওয়া হবে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রি সম্মাননা’।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি বলেছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হোক এটা চায়না বিরোধী দল। তারা চায় আওয়ামী লীগ সরকার যেন বিপদে পরে।
মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতাকারী বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর প্রসঙ্গ উঠলে তিনি আরও বলেন, তারিখ ঠিক না হলেও দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের তদন্তে সহসাই আসবে সৌদি তদন্ত দল।
আইএসআই এর কাছ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার টাকা নেওয়ার ইস্যুতে তিনি বলেন, আমরা ট্রান্সক্রিপ্টটা পাওয়ার চেষ্টায় আছি।

শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনাল বিশ্লেষণ

জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক ফারুক আহমেদের মতে, পাকিস্তানের ইনিংসে করা বাংলাদেশের শেষ ওভার আর সাকিবের আউটই পরাজয়ের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট। তারপরও এশিয়াকাপ থেকে বাংলাদেশের অর্জনকে ছোট করে দেখতে রাজি নন তিনি। বরং এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রতি জোড় দেন সাবেক এই ক্রিকেটার। আর মাশরাফির মতে, বাংলাদেশ এখন বড় দল হওয়ার পথে।
ধারাবাহিকতা, এশিয়াকাপ হাতে না উঠলেও টুর্নামেন্ট জুড়ে বাংলাদেশের এটাই বড় অর্জন। ব্যাট হাতে ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামীমের ২৫৩, সাকিবের ব্যাটে ২৩৭ রানের সঙ্গে ৬ উইকেট, নাসিরের ১৬৫ কিংবা নিজেকে ফিরে পাওয়া মাশরাফি মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো। এসব মিলিয়েই বাংলাদেশ নামের সঙ্গে বিশ্বসেরারা জুড়ে দিয়েছেন একটি শব্দ ‘টিম-স্পিরিট’। একেই অর্জন হিসেবে দেখছেন দেশের সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা।
পেইসার মাশরাফি বিন মর্তুজার মতে, বাংলাদেশ এ ধরনের অবস্থার মধ্যে পরে অভ্যস্থ নয়। তবে সুখের কথা হচ্ছে, আমরা এ রকম অবস্থার মধ্যে পড়তে শুরু করেছি। এবং এভাবেই আমরা নিজেদের তৈরি করে নিতে পারবো। প্রায় একই রকম মত জাতীয় সাবেক ক্রিকেটার এবং নির্বাচক ফারুক আহমেদের, বাংলাদেশের বড় অর্জন হলো ‘একটা দল’ হয়ে খেলতে পারা। বাংলাদেশের যে যোগ্যতা আছে সেটা তারা প্রমান করে দিয়েছে। এখন শুধু সেই ধারাবাহিকতাটুকু ধরে রাখতে হবে।
পরাজয়ের পোষ্টমর্টেম করতে গিয়ে সাবেক এই ক্রিকেটার ও নির্বাচক বলেছেন, ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট দুটি। পাকিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভারে শাহাদাতের করা শেষ ওভার আর সাকিবের আউট। তবে তারপরও বাংলাদেশ যা পেয়েছে তাই অনেক।
তবে সাবেক এই নির্বাচকের মতে, এখন পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। বরং নিজেদের সেরা দল হিসেবে গড়ে তোলাটাই জরুরী। ফারুক বলেন, বড় দল হয়ে উঠতে হলে এমন কিছু দেখাতে হয় যা বাংলাদেশ দেখাতে পেরেছে।
আর বিশ্ব ক্রিকেটের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে নিজেদের শক্ত দল তৈরিতে ‘ধারাবাহিক’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা।

২.
এশিয়া কাপ দিয়েই ক্রিকেটবিশ্বে বড় শক্তি হয়ে ওঠার আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ। মাত্র দুই রানের জন্য এশিয়া সেরার মুকুট না পেলেও যোগ্যতা প্রশ্নে এই দলটি পেয়েছে ‘একশ তে একশ’! কাপ না জেতার আফসোস থাকলেও ক্রিকেটাররাও মনে করেন, এই টুনর্মামেন্ট অনেক দিয়েছে বাংলাদেশকে। এখন জরুরী এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।
‘ইস্’ ... এশিয়া কাপের ফাইনাল শেষে কোটি বাংলাদেশির মুখে উচ্চারিত ধ্বনি! মাত্র দুই রানের আক্ষেপ! হতে হতেও পূরণ না হওয়া এক স্বপ্নগল্পের সমাপ্তি হলো কান্নায়। পুরো বাংলাদেশের মতো চোখের জলে ভেসেছেন ক্রিকেটের বীর সেনারাও।
চোখেমুখে হতাশার ছবি স্পষ্ট। তিন সাবেক বিশ্বসেরাদের টপকে এশিয়া সেরা হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয়নি ঠিকই তবে, ওই চোখের জলেই লেখা হয়ে গেছে অন্য রকম এক ক্রিকেট কাব্য। যেখানে লেখা হয়েছে, ‘আন্ডারডগ’-এর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে আরেকটি নাম, বাংলাদেশ। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার মতে, আমরা নিজেদের সেরাটা দেখিয়েছি। যদিও জিততে পারি নাই তবে সেটা সম্ভবই হলেও হতে পারতো।
আর সাকিব আল হাসান মনে করেন, বাংলাদেশের এই অর্জনটা ধরে রাখতে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। আগামী ছয় মাস বাংলাদেশের কোন খেলা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নিজের অবশ্য সমস্যা নেই, ছুটি নেই তবে অন্যদের নিজেদের মতো করে প্র্যাকটিস করে যেতে হবে।
হেরে যাওয়ার কারণ এবং নিজের পারফরমেন্সের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, আমি একটা সিঙ্গেলস নিয়ে সাকিবকে দিতে চেয়েছিলাম। তবে সেটা হলো না। দূর্ভাগ্য।
তবে তিনি মনে করেন, ঘরের মাটি আর চীরায়ত ক্রিকেটীয় ধারাবাহিকতার বিবেচনায় ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমেও অল্পতে হার মানা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মনে করেন, এই টুর্নামেন্ট তাদের দিয়েছে অনেক।
টুর্নামেন্ট জুড়ে ‘একটা দল’ হয়ে খেলা বাংলাদেশ মাঠে থাকবে না দীর্ঘ সময়। ধারাবাহিক হয়ে ওঠা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য তা কতটা সুখের সেটা নিয়েই এখন ভাবনা জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের।

বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১২

তিস্তার পানি পেতে করিডরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ॥রমেশ চন্দ্র সেন

তিস্তার পানির হিস্যা পেতে ভারতের বিপক্ষে প্রয়োজনে করিডরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। পানি দিবসের কর্মশালায় যোগ দিয়ে একথা বলেছেন পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি বলেছেন, তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি নিজেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সঙ্গে বৈঠক করতে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
এবারের বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ... ‘পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা’। দিনটি উপলক্ষে কৃষি, স্থানীয় সরকার, সমবায় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় আয়োজন করে এই তথ্য-উপাত্তভিত্তিক কর্মশালার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালায় অংশ নেন শিক্ষক, গবেষক আর বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রী জানান, তিস্তার পানির ন্যয্য হিস্যা নিয়ে দেন-দরবার অব্যাহত রয়েছে ভারতের সঙ্গে।
মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ভারতের সঙ্গে দেন-দরবারের জন্য আমাদের হাতে এখনও করিডর আছে। আমরা এখনও ভারতের সেভেন সিস্টারসকে করিডর দেইনি। ফলে সেই বিষয়টা তো আমাদের হাতেই আছে।
অনুষ্ঠানের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানান, তিস্তার পানিতে বাংলাদেশের অধিকার আছে আর সেই অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে তার সরকার। তিনি বলেন, তিস্তার পানি বন্টন বিষয়ে আলোচনা করতে আমার নিজেরও মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ আছে।
এছাড়াও পানি দিবস উপলক্ষে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে শোভাযাত্রা, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
পান্থ রহমান

বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১২

দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের তদন্তে সন্তুষ্ট সৌদি আরব

বাংলাদেশের বর্ষা দেখতে চান সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের আমন্ত্রন

দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের ইস্যুতে বাংলাদেশের তদন্ত কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট সৌদি আরব। তবে তারা আশা করেেছ, দ্রুতই দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ।
সৌদি সময় সকাল এগারোটায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ আল ফায়সাল এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তদন্তের অগ্রগতি এবং একটি বিশেষ তদন্ত দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা বিবেচনার কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি টেলিফোনে চ্যানেল আইকে জানান, বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক নেওয়ার কথাও বিবেচনায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল ফায়সাল। ডাক্তার দীপু মনি বলেন, সৌদি আরবে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে বলে এখন লোকবল নেওয়ায় মন্দাভাবের কথা জানিয়েছেন সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে আমাকে তিনি আশ্বস্থ করেছেন, বাংলাদেশের কথা আলাদা করে বিবেচনা করার। এ সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসীদের কাজের সুনাম করেছেন বলেও জানান ডাক্তার দীপু মনি।
আলোচনার এক পর্যায়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল ফায়সাল বাংলাদেশের বর্ষা দেখার আগ্রহ দেখান। তখন সামনের বর্ষাতেই বাংলাদেশে আসার জন্য সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানান দীপু মনি। সৌদি আরব সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জানান, সৌদি আরবে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের ইকামা ও চাকরী পরিবর্তনের জটিলতা সমাধানে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের কথা সৌদি প্রবাসীদের জানিয়েছেন ডাক্তার দীপু মনি।
এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ে খুব দ্রুতই একটি চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সৌদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি।
সৌদি আরব সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জানান, সৌদি আরবে অবস্থান করা বাংলাদেশিদের ইকামা ও চাকরী পরিবর্তনের জটিলতা সমাধানে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের কথা সৌদি প্রবাসীদের জানিয়েছেন ডাক্তার দীপু মনি।
পান্থ রহমান

সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বিজ্ঞপ্তি


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সেগুনবাগিচা, ঢাকা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা ১৯ মার্চ ২০১২
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দিনগুলোতে খাদ্য কৃষি সংস্থা (ঋঅঙ) এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবেপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আজ সোমবার সংস্থাটির মহা-সচিব হোসে গ্রাসিয়ানো ডা সিলভার সাক্ষাতকালে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশকে সমর্থন সহযোগিতা প্রদানের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ঋঅঙ এর মহা-সচিবকে ধন্যবাদ জানানখাদ্য পাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেঋঅঙ মহা-সচিব বলেন, দেশটি অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে একটি মডেলহিসেবে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে
খাদ্যশস্য পাদনের সাথে স্য সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সক্ষম হবে বলে ঋঅঙ মহা-সচিব আশা প্রকাশ করেনএভিয়ান ফ্লুসহ আন্তঃসীমান্ত পশুরোগ বিস্তার রোধে সচেতনতা প্রসারে সতর্ক ব্যবস্থা অবলম্বনে ঋঅঙ বাংলাদেশ একযোগে কাজ করে যাবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঋঅঙ মহা-সচিব ঐকমত্য পোষণ করেন
ঋঅঙ মহাসচিব দুদিনের এক সফরে বাংলাদেশে এসেছেনসফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উচ্চপদস্থ সরকারী নেতৃবৃন্দের সাথে তিনি সাক্ষা করেনমঙ্গলবার তাঁর ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সরকারী সফরে ১৯-২৪ মার্চ ২০১২ সৌদি আরব গমন করবেনতিনি আজ রাত ০৯:০৫ ঘটিকায় এমিরেটস এর ফ্লাইটযোগে রিয়াদের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন
(পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন শচীন

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে একশ সেঞ্চুরির একমাত্র ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে সাক্ষা করতে যাচ্ছেন এদিন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ এটা নিশ্চিত করেছেন
প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এদিন সন্ধ্যায় যাবেন ক্রিকেটের বরপুত্র শচীন রমেশ টেন্ডুলকার
উল্লেখ্য, এর আগে শচীনের শততম সেঞ্চুরির পর প্রধানমন্ত্রী মিষ্টি ও ফুল পাঠিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান
চলমান এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে গত ১৬ মার্চ ৫ উইকেটে হেরে যায় ভারতওই ম্যাচেই শততম সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান শচীন

সীমান্তে রাতের কারফিউর বিপক্ষে বিজিবি


নয়া দিল্লি, মার্চ ১৯
সীমান্তে রাতে চলাচল এড়াতে কারফিউ জারি করতে ভারতের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ
এর পরিবর্তে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের অপরাধের বিষয়ে সচেতন করে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে ঢাকা
সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যার জন্য সমালোচনার মধ্যে থাকা ভারত এই ধরনের ঘটনা এড়াতে রাতে সীমান্ত এলাকায় কারফিউ জারির জোর সুপারিশ জানিয়ে আসছে
এই বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির প্রধান মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কারফিউতে বিশ্বাস করি নাআমরা মনে করি, সীমান্তে বসবাসকারীদের স্ব স্ব দেশের ভূমিতে অবাধ চলাফেরার অধিকার রয়েছে
আর কারফিউ একটি সাময়িক ব্যবস্থা, এর মধ্য দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসবে না, বলেন তিনি
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন শেষে সোমবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী প্রধানএসময় তার পাশেই ছিলেন ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী- বিএসএফের প্রধান ইউ কে বানসাল
সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনের বিষয়ে মেজর জেনারেল আনোয়ার বলেন, সীমান্তে হত্যার বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্টআমরা মনে করি, সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়
সীমান্ত সম্মেলনে দুই দেশের সীমান্তের ২৩টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তিনি জানানএই সব স্থানে অপরাধ দমনে যৌথ টহল জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছেপাশাপাশি নিরস্ত্র মানুষের মৃত্যু এড়াতেও দুই পক্ষ একমত হয়েছে
সীমান্ত এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বটি আমাদেরই নিতে হবে, বলেন বিজিবি প্রধান
বিএসএফ প্রধান বানসাল বলেন, সীমান্তবাসীকে সচেতন করে তুলতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে মতৈক্য হয়েছেএক্ষেত্রে উভয় পক্ষ একে অপরকে সহযোগিতা করবে
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমাতে বিএসএফ সদস্যদের প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলা আদালতেই সমাধান চায় বাংলাদেশ॥ দীপু মনি


পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি বলেছেন, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালত থেকে ফিরে আসার সুযোগ নেই; তবে ভারত চাইলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারেকিন্তু সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিশ্চিত হতে হবেসংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও আইএসআইএর কাছ থেকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার টাকা নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের আদালতের কাছে অনুলিপি চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে তিনি
মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্রসীমা মামলায় পাওয়া জয় উপলক্ষেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনআর প্রত্যাশিতভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ভারতের বিপক্ষে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত একই রকম মামলা এবং সেই মামলা নিয়ে ভারতের আলোচনা-প্রস্তাবের প্রসঙ্গটিমন্ত্রী জানান, শান্তিপূর্ণ সমাধানের খাতিরে আলোচনা হতেই পারেতবে যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় বাংলাদেশের ন্যয্যতানিশ্চিত হয়েছে তাই ভারতের বিপক্ষেও নিজেদের দাবী নিশ্চিত করাই হবে বাংলাদেশের মূল টার্গেট
বন্ধু দেশের সঙ্গে তো আলোচনা হতেই পারেতবে বাংলাদেশ যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় জিতেছে এবং তাতে যেহেতু ন্যয্যতার প্রিন্সিপাল নির্ধারিত হয়েছে ফলে আমরা তো আমাদের ন্যয্য হিস্যা নিশ্চিত করবই‘’
ভারতের বিপক্ষে করা সমুদ্রসীমা বিরোধ ইস্যু ও এক্ষেত্রে ভারতের আলোচনা প্রস্তাব নিয়ে তিনি আরও বলেন,  সালিশি আদালত থেকে নিজেদের মামলা তুলে নেওয়ার তো কোন সুযোগ নেইবরং মামলা চলা অবস্থায়ই আলোচনার পথ খোলা আছে, একথা আমরা আগেও বলেছিতবে আমরা আমাদের নিজেদের হিস্যা নিশ্চিত হলেই কেবল অন্য চিন্তা করবো
প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী জানান, বিষয়টি মিমাংসা হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ চাইলেই নিজেদের অংশে তেল-গ্যাসের ব্লক পুননির্ধারণ করতে পারে
ডাক্তার দীপু মনির জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে ফ্রিগেড, হেলিকপ্টারসহ নিজেদের সমুদ্রসীমা নিরাপত্তার সরাঞ্জাম দেওয়া হয়েছে
বিরোধী দলীয় নেতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, জনগণের স্বার্থেই বিষয়টি জানতে চাইবে বাংলাদেশ
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে আইএসআই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অর্থ দিয়েছিল- গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপুর মনি অনুলিপি চাওয়ার কথা জানান

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া দরকারকিন্তু খালিজ টাইমসে যা প্রকাশিত হয়েছে, কেবল সেটুকুই আমরা জানি

আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অবৈধ পন্থায় অর্থ লেনদেনের অভিযোগ করে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খানের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট স¤প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেএরই অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহাম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চে গত বুধবার সাক্ষ্য দেন আসাদ দুররানি

ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বৃহস্পতিবার তাদের ভারত সংস্করণে জানায়, দুররানি ১৯৯১ সালে বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কথা শুনানিতে স্বীকার করেছেনএর আগে একই ধরনের সংবাদ প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের দৈনিক খালিজ টাইমস

এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর থেকেই এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে

প্রধানত দিল্লিভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমেই এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দীপু মনি বলেন, আমি শুধু খালিজ টাইমসের লেখাটাই দেখেছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ১০ মার্চ বিরোধী দলের সমালোচনা করতে গিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার কথা তুলে ধরেনএরপর ১২ মার্চ নয়া পল্টনের জনসভায় ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তাদের বিদেশি টাকার প্রয়োজন নেই

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তারা ইতোমধ্যে আসাদ দুররানির বক্তব্যের অনুলিপি সংগ্রহ করেছেনএতে বিএনপিকে অর্থ দেওয়ার কোনো কথাই দুররানি বলেননি
এ প্রসঙ্গে ডাক্তার দীপু মনি বলেন, আমরা পাকিস্তানের কাছে ট্রান্সক্রিপ্টটা চাইবোকারণ আমাদের জনগণের কাছে বিষয়টি জানাতে হবে
ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় আগামী ২১ মার্চ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার দীপু মনি
পান্থ রহমান

রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রথম আলোর গোলটেবিল


সমুদ্রসীমা ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কোন আলোচনা নয় বরং আদালতেই ফয়সালা করার দাবী জানিয়েছেন এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমুদ্রসীমা বিষয়ে পড়ানোর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা
মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্রসীমা মামলায় পাওয়া জয়কে উপলক্ষ করেই প্রথম আলোর এই গোলটেবিল বৈঠক। শিরনাম: সমুদ্রসীমা জয়: সম্ভবনা ও করণীয়। আলোচকদের সকলেই সমুদ্রসীমা ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ। বৈঠক শুরু করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশের পক্ষে সমুদ্রসীমার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম। কিভাবে জয় এলো সেই বিষয়টি পরিস্কার করেন তিনি। আহ্বান জানান, রাষ্ট্রের এই জয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার।
রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব:) খুরশিদ আলম বলেন, এই জয় নিয়ে অযথাই কোন প্রশ্ন তুলবেন না বরং কোন ভুল ধরতে হলে দয়রা করে যুক্তি দিয়ে করুন। তিনি ্আরও বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না হলে এটা সহজ হতো না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল প্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান আলোচকরা। তবে গ্যাসব্লক আর মহীসোপানে বাংলাদেশের হিস্যা নিয়ে ওঠে নানান প্রশ্ন।
অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এই বিষয় পড়ানো উচিত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনিস্টিটিউটগুলোতে এটাকে বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। নইলে আমাদের এক্সপার্টিজ তৈরি হবে না। যেটা এই মুহুর্তে খুব জরুরী।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান শাহ আলমের মতে, আমরা তো হারি নাই কিন্তু কারো কারো বক্তৃতা দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশ হেরেই গেছে। ইকুইটি নাকি ইকুইডিসটেন্স এটাই ছিলো বড় বিষয়, সেই দিক দিয়ে আমরা সফল হয়েছি। আমি তো কোন ব্যর্থতা দেখিনা।
ভূতত্ববিদ বদরুল ইমামের মতে, এই আইনটা আমাদের কাছে পরিস্কার ছিলো না। আপনাদেরকে বলতে হবে। আইন মানুষকে জানাতে হবে।
এম এইচ খানের মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া এজাতীয় টার্গেট ফিল করা যায় না।
নানা বিষয়ে বিতর্ক উঠলেও সমুদ্রসীমা ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা না করার ক্ষেত্রে একমত ছিলেন সবাই।
আনু মোহম্মাদ তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কোন কারণ নেই। তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অভিজ্ঞতা আমাদের ভালো নয়।
তিনি আরো বলেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। সেটা ভূমিতেই হোক কিংবা সাগরে। আমাদের সম্পদ যেন মানুষের কল্যানে ব্যবহার করা যায় সেটাই জরুরী।
জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার ওপরও তাগিদ দেন আনু মোহাম্মদ।
সাবেক নৌপ্রধান এমএইচ খান বলেন, স্বার্থের ক্ষেত্রে কেউ কারো বন্ধু নয় বরং আমাদের হাতে ডেটা আছে আমরা ফাইট করবো।
নোয়ামীর চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আহমদ তার বক্তৃতায় বলেন, আমাদের কোন কারণেই ডিফেন্সিভ হওয়ার দরকার নেই। আমাদের সার্ভে ভ্যাসেল ছিলো না। তারপরও আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি। আমাদের এখন নিয়মিত ভিত্তিতে ভ্যাসেল লাগবে। আমাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে।
সমুদ্রসীমার মতো অন্য জাতীয় ইস্যুতেও সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান আলোচকরা।
পান্থ রহমান

শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১২

সীমান্তে সৈন্য পাঠায়নি নাসাকা

সমুদ্রসীমা নিয়ে মামলার রায় ঘোষণার পর সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের তথ্য সঠিক নয় বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাসাকা।
শনিবার সকালে নাসাকার সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর বিজিবি-৪২ টেফনাফ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জাহিদ হোসেন বলেন, “সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাসাকা বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এটা সংবাদ মাধ্যমের ভুল প্রচার।”
সমুদ্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল বুধবার বঙ্গোপসাগরের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়।
এরপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে, মিয়ানমার নাইক্ষংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে। এমন খবরের পরই বিজিবির পক্ষ থেকে নাসাকাকে পাতাকা বৈঠকের চিঠি দেওয়া হয় বলে লেফটেন্যান্ট জাহিদ জানান।
তিনি বলেন, “রায় সম্পর্কে মিয়ানমার সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে নাসাকা জানায়, এ বিষয়টি তাদের সরকার ভালো দৃষ্টিতে দেখছে। কারণ এতোদিন সমুদ্র সীমানা নিয়ে তারাও ধোঁয়াশায় ছিলেন। রায়ের মধ্য দিয়ে সেটি দূর হয়েছে।”
দুই দেশের সম্পর্ক ভালো রাখতে নাসাকা কর্মকর্তারা সহযোগিতা বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও বিজিবি অধিনায়ক জানান।
নাসাকার ৬ নম্বর সেক্টর কার্যালয় মংডু টাউনশিপে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ব্যাটালিয়ান পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠকে বিজিবির আট সদস্যের এবং নাসাকার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
নাসাকা দলের নেতৃত্বে ছিলেন ৫ নম্বর সেক্টরের উপ পরিচালক ইউ ডি মিন থিং এবং ৬ নম্বর সেক্টরের উপ পরিচালক অং থিন অং। আর বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ হোসেন।

ভারত সমুদ্রসীমার দ্বিপাক্ষিক সমাধানে আগ্রহী

সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে আগ্রহী ভারত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক শেষে একথা জানিয়েছেন, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ।
ঢাকায় ভারতের এই নয়া হাহইকমিশনার প্রথমবারের মতো দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনির সঙ্গে। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর মধ্যে তিস্তার পানি বন্টন, সীমানা নির্ধারণ ও সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সালিশি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পঙ্কজ। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা জেতায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক শালিস আদালতে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।
জাতিসংঘ আদালতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা-বিরোধ সংক্রান্ত মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে যাওয়ার দুই দিনের মাথায় ভারত এ অভিমত জানালো।

বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ রয়েছে যা নিয়ে চলমান মামলার রায় ২০১৪ সালে হওয়ার কথা।
মিয়ানমারের সঙ্গেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ ছিল যা বুধবার জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে দীর্ঘ ৩৮ বছর পর মীমাংসা হয়।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ টেরিটরিয়াল ওয়াটার ও মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট করলে ভারত ও মিয়ানমার বাংলাদেশের ঘোষিত বেইজলাইন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল, বাংলাদেশের বেইজলাইন তাদের সমুদ্রসীমায় ২০ নটিক্যাল মাইল ঢুকে গেছে।
৫৪ বছর বয়সী পঙ্কজ হাই কমিশনার হিসাবে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পেয়ে ঢাকা পৌঁছান গত ৭ মার্চ। তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন ১৯৮২ সালে।
নিজ দেশের বাইরে তার প্রথম কর্মস্থল ছিল বাংলাদেশই। ঊনিশশ আশির দশকের শেষভাগে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এবার ভারতের সঙ্গে মামলার প্রস্তুত শুরুর তাগাদা

সমুদ্রসীমা মামলায় মিয়ানমারের বিপক্ষে জয়ে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ভারতের বিপক্ষে মামলার প্রস্তুতি শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা। তাদের মতে, ওই মামলায় জেতার পরই বাংলাদেশের প্রাপ্তি পূর্ণাঙ্গতা পাবে। এছাড়া প্রাপ্ত সম্পদ রক্ষার দিকেও মনোযোগি হওয়ার পরামর্শ্য দিয়েছেন তারা।
গভীর সমুদ্রে নিজেদের প্রাপ্য সম্পদের জন্য শুরুতে দেন-দরবার এবং তাতে কাজ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। 

দুই পড়শি দেশ ভারত আর মিয়ানমারের বিপক্ষে সালিশি আদালতে যাওয়ায় সমালোচনাও হয় অনেক। তবে গত ১৪ মার্চ আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে গেলে থেমে যায় সমালোচনা। যদিও বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলেছেন, মামলার সিদ্ধান্ত যথার্থই ছিলো। বরং মিয়ানমারের বিপক্ষের অভিজ্ঞতা ভারতের সঙ্গে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। তাদের মতে, এতটুকু দূর্বলতাও ক্ষতির কারণ হতে পারে। সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাক আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ডক্টর ইমতিয়াজ আহমেদ দুজনেই বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে জয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলায়। কেননা মিয়ানমারের মতো ভারতেরও দাবী রয়েছে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা ভাগ করার। যেহেতু মিয়ানমারের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক আদালত ন্যয্যতার ভিত্তিতে রায় দিয়েছে সেক্ষেত্রে ভারতের বিপক্ষে মামলায় বাংলাদেশ আগেভাগেই একটু এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন এই দুই বিশেষজ্ঞ।
আদালতের রায়ে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা আর মহীসোপানে অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশে। আয়তনে যা ১ লাখ ১১ বর্গ কিলোমিটারের বেশি। প্রাপ্ত এই অঞ্চলে থাকা সম্পদ রক্ষাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাক আহমেদ মনে করেন, এখন নিজেদের প্রাপ্য সমুদ্রসীমা নজরদারীতে রাখা উচিত। কেননা, এখানে সম্পদের পরিমান অনেক এবং তা রক্ষা করার একটা চ্যালেঞ্জ। ভূতত্ববিদ বদরুল ইমাম বলেন, সবচে আগে প্রয়োজন সম্পদের হিসেব তৈরি করা এবং তারপর সম্পদগুলো ব্যবহার উপযোগি করে তোলার জন্য কাজ শুরু করা। সেক্ষেত্রে তিনিও সমুদ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। বদরুল ইমাম বলেন, গভীর সমুদ্রে অনেক সম্পদ ফলে একে রক্ষার জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থাকা গ্যাস ব্লকগুলো নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরুরও আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পান্থ রহমান

শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালী দিন!

ক্যাপশন যুক্ত করুন
ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত, দাবী খুরশিদ আলমের

সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলায় মিয়ানমারের বিপক্ষে পাওয়া জয় ভারতের সঙ্গে জয়কেও সহজ করে দিয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান একই রকম বলে ওই মামলাতেও বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম। জয় নিয়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের করা তিনটি দাবীই মেনে নিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।

ভৌগলিক বিশেষত্বের কারণেই সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধ ছিলো মিয়ানমার আর ভারতের। দীর্ঘ প্রায় চার দশকেও সেই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় যেতে হয় আদালত পর্যন্ত। সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওই সর্বোচ্চ আদালতে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা রেখা দাবী করে মিয়ানমার। তাদের হিসেবে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে, ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। পাবে না মহীসোপানও। কিন্তু দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক শেষে গত ১৪ মার্চ ওই আদালত রায় শোনান ন্যয্যতার ভিত্তিতে। আদলত স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়িই সেন্টমার্টিন দ্বীপ আর সমুদ্রে অর্থনৈতিক এলাকা পাবে বাংলাদেশ। পূর্ণ অধিকার থাকবে মহিসোপানেও।

অনেকের মতে, ‘সমুদ্র জয়’ করে ফেরা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়, ফুলেল শুভেচ্ছায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন কথা না বললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এই জয় সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবঃ) খুরশিদ আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার যেভাবে নিজেদের রেখা টেনেছিলো তাতে বাংলাদেশ কোন ভাবেই মহীসোপানে নিজেদের অধিকার পেতো না। কেননা মিয়ানমার আর ভারতের টানা রেখার পর বাংলাদেশের জন্য কেবল ১৩০ নটিক্যাল মাইলই অবশিষ্ট ছিলো। আর সে কারণেই আন্তর্জাতিক আদালতে যায় বাংলাদেশ। অবশেষে ১৪ মার্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ১৩০ নয় বরং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকা পাবে। শুধু তাই নয় বরং ওই দূরত্বের পর বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য মহীসোপানও উন্মুক্ত থাকবে। খুরশিদ আলম বলেন, মিয়ানমার আদালতের কাছে মিয়ানমার সেন্টমার্টিন দ্বীপের মাত্র ৬ কিলোমিটার বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করেছিলো। তবে মিয়ানমারের ওই দাবী নাকচ করে দেন আদালত। উল্টো বাংলাদেশের দাবী অনুযায়ি সেন্টমার্টিন দ্বীপের থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়ে দেন আদালত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তিনটি দাবীই মেনে নিয়েছেন সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ এই আদালত।
প্রশ্নের উত্তরে খুরশিদ জানান, ‍আদালত বাংলাদেশের দাবী অনুযায়ি ‘ন্যয্যতা’র ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। তাতে করে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে বিরোধ মেটাতেও এই রায় সহযোগিতা করবে। কেননা মিয়ানমারের মতো ভারতের দাবীও প্রায় একই রকম। তাছাড়া, এই আদালতের তিনজন বিচারক ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির ওই আদালতেও থাকবে, সে কারণে আমি মনে করি না ওই রায়টা আমাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোন কারণ আছে।

ন্যয্যতার ভিত্তিতেই রায় হয়েছে উল্লেখ করে খুরশিদ আলম আশা করেন, সব সময়ের মতো বাংলাদেশের নৌবাহিনী এখনও দেশের সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সচেষ্ট থাকবে।

ন্যয্যতার ভিত্তিতে রায় হওয়ায় মিয়ানমারকেও কিছু অংশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা বলেন, তাতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হয়নি বরং চাহিদার চেয়ে বেশিই পেয়েছে বাংলাদেশ।
পান্থ রহমান

বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

জার্মানির হামবুর্গ থেকে পাঠানো নোট


আজ বাংলাদেশের জনগনের জন্য অত্যন্ত গৌরবময় এবং আনন্দের দিনবঙ্গোপসাগরের জলরাশি এবং তলদেশের সম্পদরাজি-তে আজ বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছেজাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আদালত International Tribunal for Law of the Sea তথা ITLOS বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকায় এবং তদুর্ধ মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ অধিকারের আইনগত স্বীকৃতি দিয়েছে
আপনারা অবগত আছেন যে, বঙ্গোপসাগরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অমিমাংসিত রয়েছে যার ফলে দীর্ঘ ৩৮ বছর যাব আমরা সমুদ্র সম্পদ আহরন করতে ব্যর্থ হয়েছিআমাদের সরকার দায়িত্বগ্রহনের পর অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দ্রুততম সময়ে সমুদ্রসীমা নির্ধারনের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের আশ্রয় নেয়তারই প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর মিয়ানমারের বিপক্ষে জার্মানীর হামবুর্গে অবস্থিত সমুদ্র আইন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়২৩ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইবুনাল আজ এক ঐতিহাসিক রায়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ন্যায্যতা ভিত্তিক সমুদ্রসীমার দাবীকে সমুন্নত রেখেছেমিয়ানমারের প্রস্তাবিত সমদুরত্ব পদ্ধতি যা কিনা বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকাকে ১৩০ ন্যটিক্যাল মাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়, তা প্রত্যাখ্যান করে ট্রাইবুনাল ইকুইটি (ন্যায্যতা)-র ভিত্তিতে দুদেশের সমুদ্রসীমা চুড়ান্তভাবে নির্ধারন করে দিয়েছে
এপ্রসংগে আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে আরো বলতে চাই যে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এ অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসাবে মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৪ সালে Territorial Waters and Maritime Zones Act পাশ করেএছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা নির্ধারনে আলোচনা-ও ১৯৭৪ সালে শুরু করা হয়এরপর পরবর্তী সরকারগুলো সাগরে এবং সাগরের সম্পদে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ফলপ্রসু কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়২০০১ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন অনুসমর্থন করে এবং ২০০৯ সালে আমাদের সরকারই এই আইনের অধীনে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা চুড়ান্ত ভাবে নির্ধারনের জন্য ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করেআজকে আমরা তার সুফল পেয়েছিবঙ্গোপসাগরের জলরাশি এবং তলদেশের সকল প্রানীজ ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, ব্যাবস্থাপনা এবং সংরক্ষনের নিরঙ্কুশ অধিকার আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্য প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করেছিআমাদের এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগীতা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য আমি এই দেশের আপামর জনসাধারনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই
(এই নোটটি পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের দপ্তর থেকে পাঠানো হয়)

সমুদ্রসীমা মামলায় জয় এখন প্রয়োজন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ায় খুশি মিয়ানমার। সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় মিয়ানমার মেনে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন, ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ মিন লুইন। আর এই রায়কে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করে দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভূতত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়েই সমুদ্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে নামতে হবে। বঙ্গোপসাগর নিয়ে একটি আলাদা কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব তাদের।

প্রায় চার দশক ধরে ঝুলে থাকা সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে। বাংলাদেশের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে জার্মানির হামবুর্গের ওই আদালতে দফায় দফায় শুনানি আর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রায় আসে ১৪ মার্চ। তাতে মিয়ানমারের দাবী করা ‘সমদূরত্ব’ পদ্ধতি না মেনে ‘ন্যয্যতা’র ভিত্তিতেই সমুদ্রের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকা বরাদ্দ হয় বাংলাদেশের জন্য।

এই রায়ে দারুণ আনন্দিত দেশের কূটনীতিক আর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে দেখছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন খাত হিসেবে। তাদের মতে, সমুদ্রে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরুর পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করাও জরুরী।
আশফাক আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এখন সমুদ্রে আমাদের অংশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আশফাক আহমেদ মনে করেন, বে অফ বেঙ্গল বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করা উচিত বাংলাদেশের। যার মাধ্যমে সমুদ্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ সব ধরনের কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে।
ভারতের সঙ্গে করা সালিশি আদালতেও এই রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে আশফাক আহমেদ এবং বদরুল ইমাম, ভূতত্ববিদ মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলাও ঠিক একই ধাঁচের। ফলে যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে বিষয়টির সমাধান দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত ফলে একই ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে রায়ও বাংলাদেশের পক্ষেই যাবে।

অন্যদিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে যোগ দিয়ে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এই রায় দুই দেশকেই জয়ী করেছে। তার মতে, মিয়ানমার বিষয়টি মেনেই নিয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোন ক্ষতি হবে না বলেই মনে করেন এই রাষ্ট্রদূত।
পান্থ রহমান