পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত, দাবী খুরশিদ আলমের

সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলায় মিয়ানমারের বিপক্ষে পাওয়া জয় ভারতের সঙ্গে জয়কেও সহজ করে দিয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান একই রকম বলে ওই মামলাতেও বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম। জয় নিয়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের করা তিনটি দাবীই মেনে নিয়েছে আন্তর্জাতিক আদালত।

ভৌগলিক বিশেষত্বের কারণেই সমুদ্রসীমা নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধ ছিলো মিয়ানমার আর ভারতের। দীর্ঘ প্রায় চার দশকেও সেই বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় যেতে হয় আদালত পর্যন্ত। সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত জাতিসংঘের ওই সর্বোচ্চ আদালতে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সীমা রেখা দাবী করে মিয়ানমার। তাদের হিসেবে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে, ১৩০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। পাবে না মহীসোপানও। কিন্তু দীর্ঘ যুক্তি-তর্ক শেষে গত ১৪ মার্চ ওই আদালত রায় শোনান ন্যয্যতার ভিত্তিতে। আদলত স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়িই সেন্টমার্টিন দ্বীপ আর সমুদ্রে অর্থনৈতিক এলাকা পাবে বাংলাদেশ। পূর্ণ অধিকার থাকবে মহিসোপানেও।

অনেকের মতে, ‘সমুদ্র জয়’ করে ফেরা বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানো হয়, ফুলেল শুভেচ্ছায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন কথা না বললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এই জয় সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সমুদ্রসীমা বিষয়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবঃ) খুরশিদ আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার যেভাবে নিজেদের রেখা টেনেছিলো তাতে বাংলাদেশ কোন ভাবেই মহীসোপানে নিজেদের অধিকার পেতো না। কেননা মিয়ানমার আর ভারতের টানা রেখার পর বাংলাদেশের জন্য কেবল ১৩০ নটিক্যাল মাইলই অবশিষ্ট ছিলো। আর সে কারণেই আন্তর্জাতিক আদালতে যায় বাংলাদেশ। অবশেষে ১৪ মার্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ১৩০ নয় বরং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক এলাকা পাবে। শুধু তাই নয় বরং ওই দূরত্বের পর বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য মহীসোপানও উন্মুক্ত থাকবে। খুরশিদ আলম বলেন, মিয়ানমার আদালতের কাছে মিয়ানমার সেন্টমার্টিন দ্বীপের মাত্র ৬ কিলোমিটার বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করেছিলো। তবে মিয়ানমারের ওই দাবী নাকচ করে দেন আদালত। উল্টো বাংলাদেশের দাবী অনুযায়ি সেন্টমার্টিন দ্বীপের থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়ে দেন আদালত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের তিনটি দাবীই মেনে নিয়েছেন সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ এই আদালত।
প্রশ্নের উত্তরে খুরশিদ জানান, ‍আদালত বাংলাদেশের দাবী অনুযায়ি ‘ন্যয্যতা’র ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। তাতে করে ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে বিরোধ মেটাতেও এই রায় সহযোগিতা করবে। কেননা মিয়ানমারের মতো ভারতের দাবীও প্রায় একই রকম। তাছাড়া, এই আদালতের তিনজন বিচারক ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির ওই আদালতেও থাকবে, সে কারণে আমি মনে করি না ওই রায়টা আমাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোন কারণ আছে।

ন্যয্যতার ভিত্তিতেই রায় হয়েছে উল্লেখ করে খুরশিদ আলম আশা করেন, সব সময়ের মতো বাংলাদেশের নৌবাহিনী এখনও দেশের সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সচেষ্ট থাকবে।

ন্যয্যতার ভিত্তিতে রায় হওয়ায় মিয়ানমারকেও কিছু অংশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা বলেন, তাতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হয়নি বরং চাহিদার চেয়ে বেশিই পেয়েছে বাংলাদেশ।
পান্থ রহমান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন