ডেস্ক রিপোর্ট
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপকে অযাচিত ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন
ভালো চলছে। তবে তিনি স্বীকার করেন ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। চ্যানেল আইকে দেয়া
সাক্ষাত্কারে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল ওই সাক্ষাত্কারটি প্রচার করা হয়।
ড. ইউনূসকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি
হিসেবে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ড.
ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে খুব বড় আগ্রহ রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হিলারির দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূসের সঙ্গে কারও কারও ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কারণে বিষয়টি আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় তারা জানতে চান ড. ইউনূসকে নিয়ে কী হচ্ছে। এটা তো একটা চাপ বটেই।
অন্যদিকে ভারতের এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে
দীপু মনি বলেছেন, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা এখনও অব্যাহত আছে। সীমান্তহত্যা
আমাদের সব অর্জনকেই বিপন্ন করেছে।
সীমান্তহত্যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলছে—এমন মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, ‘আমরা সব সময় ভারত
সরকারকে অনুরোধ করেছি এবং তারাও বারবার বলেছে সীমান্তে সর্বোচ্চ সংযম দেখাবে। বর্তমানে লক্ষণও
ভালো, তবে আমরা চাই হত্যাকাণ্ড যেন শূন্যের কোটায় নেমে
আসে। বাংলাদেশের প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তি না হলেও ট্রানজিট দেয়ার কাজ এগিয়ে চলছে
বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের
ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি কোনোভাবেই শর্ত
নয়। তবে তিস্তা চুক্তি হলে তা সহায়ক হতো।
গতবছর সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা
সফরের সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ হতাশ হয়েছে। তিনি বলেন,
‘আমরা চাই, বিষয়টি দ্রুত হয়ে যাক। আমরা অপেক্ষায় আছি। আর আমরা চাই,
দেরি না করে তাড়াতাড়িই এটা হোক।
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া
প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি এনডিটিভিকে বলেন, দুপক্ষই এ ব্যাপারে কাজ করছে। সড়ক, নৌ ও রেল ট্রানজিটের বিষয়গুলো জড়িত থাকায় এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের
উদাহরণগুলো মিলিয়ে দেখে অবকাঠামো ও আইনগত বিষয়গুলো ঠিক করা হচ্ছে। এ জন্যই এ কাজে
কিছুটা সময় লাগছে। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার কারণে ট্রানজিট আটকে আছে কি না—এনডিটিভির এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ট্রানজিটের বিষয়টি কোথাও কোনো কারণে আটকে নেই। নিজস্ব গতিতেই এর কাজ চলছে।’
গত বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের
সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে একেবারে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। দীপু মনি এনডিটিভিকে বলেন,
গত বছর নভেম্বরে ব্যাঙ্গালুরুতে আইওআরসির বৈঠক শেষে ফেরার
পথে তিনি কলকাতায় মমতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। সে সময় তদের মধ্যে তিস্তা
নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের কারণে আসামে
সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে বলে ভারতের বিরোধী দল বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা
হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে অভিবাসনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অভিবাসন হয়েছে। ১৯৭১ সালে
বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে তাদের বেশিরভাগই
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ থেকে কত লোক ভারতে অভিবাসী হয়ে গেছে
তার কোনো হিসাব বাংলাদেশের কাছে নেই।
গত মাসে আসামে মুসলমান ও বোড়ো সম্প্রদায়ের মধ্যে
শুরু হওয়া এ জাতিগত দাঙ্গায় এ পর্যন্ত অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন
প্রায় দুই লাখ মানুষ। দেশটির প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশ
থেকে যাওয়া অভিবাসীদের দায়ী করে আসছে।
১৯৭১ সালে ভারতে মানবিক কারণে বাংলাদেশের মানুষকে
আশ্রয় দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনডিটিভির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের
ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কী। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও ১৯৭১ সালের কথা ভুলে যায়নি। সে বিবেচনায় মানবিক কারণে
১৯৭৯ ও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে এসেছে, তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। দাঙ্গার পর রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাবার, প্রাথমিক চিকিত্সা ও আশ্রয় দিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে আবার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো
হয়েছে।
জুন মাসে দাঙ্গার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে প্রবেশকারীরা শরণার্থী নয়। তাহলে আপনি কীভাবে তাদের বিষয়টির সুরাহা করবেন। তাদের ফেরত পাঠাতে
হবে এবং তাদের ফিরে যাওয়াটাই একমাত্র সমাধান। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের
ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিতর্কিত লেখার পর মৌলবাদীরা তার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায়। তখন তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে
বাধ্য হন। তবে দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার সব অধিকার রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,
‘আমি তার দু-একটি বই পড়েছি। তবে তার লেখা আমি খুব একটা
পছন্দ করি না। আমি মনে করি, একজন লেখক হিসেবে অবশ্যই তার নিজস্ব ভাবনা তুলে
ধরার অধিকার আছে।
আমারদেশ: ৯ আগষ্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন