অলিম্পিক মানেই সেরা ক্রীড়াবিদদের লড়াই। তাতে কেউ কেউ জায়গা
করে নেন ইতিহাসের পাতায়। সেই ইতিহাসের পাতা উল্টেই দেখে নিন সর্বকালের সেরা পাঁচ অলিম্পিক ক্রীড়াবিদকে।
মাইকেল ফেলপস : সাঁতারু (যুক্তরাষ্ট্র)
অলিম্পিকের শতবর্ষ ছাড়ানো ইতিহাসে তাকেই
সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কৃতী
সাঁতারু মাইকেল ফেলপস। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে যিনি অতিমানবীয় কীর্তি গড়েই রেকর্ড গড়েছিলেন। আটটি ইভেন্টে অংশ
নিয়ে আটটিতেই স্বর্ণপদক জেতার একমাত্র রেকর্ডটি গড়েন ফেলপসই। ভেঙে দেন সাবেক স্বদেশি
সাঁতারু মার্ক স্পিজের ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে সাতটি স্বর্ণপদক জয়ের রেকর্ড। একটি অলিম্পিকে
সর্বাধিক আটটি স্বর্ণপদক জয়ের কারণেই যে ফেলপস সেরা তা নন, ২০০৪-এর এথেন্স অলিম্পিকেও তিনি জিতেছিলেন ছয়টি স্বর্ণপদক এবং দুটি ব্রোঞ্জপদক। দুটি অলিম্পিকে তার
ভাণ্ডারে জমা পড়েছে ১৪টি স্বর্ণপদক এবং দুটি ব্রোঞ্জ। অলিম্পিকে এখনও সর্বাধিক
স্বর্ণপদকজয়ী ক্রীড়াবিদ ফেলপস। যদি এবারের লন্ডন অলিম্পিকে আর তিনটি পদক জিততে পারেন, তাহলে অলিম্পিকে সর্বাধিক পদক জেতা অ্যাথলেটও হবেন ফেলপস।
লারিসা লাতিনিনা : জিমন্যাস্ট (রাশিয়া)
এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকে সর্বাধিক ১৮টি পদক জেতার
রেকর্ড রাশিয়ার এক সময়ের ড্রিম গার্ল, জিমন্যাস্ট লারিসা
সেমিওনোভনা লাতিনিনার। অলিম্পিক জিমন্যাসটিক্সে একসময় রাশিয়ার একাধিপত্য বিস্তারে এই তরুণীই
নিয়েছিলেন প্রধানতম ভূমিকা। ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে লারিসা স্বর্ণপদক জিতেছিলেন দলীয় প্রতিযোগিতায়, অলরাউন্ড ইভেন্ট, ফ্লোর এক্সারসাইজ এবং ভল্টে। আনইভেন বারে জিতেছিলেন
রৌপ্য, পেয়েছিলেন আরেকটি দলীয় ব্রোঞ্জপদকও। ১৯৬০ সালের রোম
অলিম্পিকেও লারিসা হিট। এবারও তিনি দলীয় ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন। স্বর্ণ জেতেন অলরাউন্ড, ফ্লোর এক্সারসাইজেও। ব্যালেন্স বিম এবং আনইভেন বারে পান রৌপ্যপদক। আর ভল্টে জেতেন ব্রোঞ্জপদক। দুর্দান্ত এই
জিমন্যাস্ট শেষবারের মতো অংশ নেন ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে। তবে তেমন সফল হতে পারেননি। কিন্তু বিদায়ের আগে
ঝুলিতে পোরেন অলিম্পিকের নয়টি স্বর্ণ, পাঁচটি রৌপ্য এবং
চারটি ব্রোঞ্জপদক।
কার্ল লুইস : অ্যাথলেট (যুক্তরাষ্ট্র)
নতুন করে কার্ল লুইসকে ক্রীড়ামোদিদের কাছে পরিচয়
করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। অলিম্পিকের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড তারকা
হিসেবেই তিনি পরিচিত। অলিম্পিকে তার ক্যারিয়ার ১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৮৪ সালেই লস
অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ইতিহাস গড়েন লুইস। পূর্বসূরি স্বদেশি জেসি ওয়েন্সের রেকর্ড স্পর্শ
করে নিজেও নাম লেখান গ্রেটদের তালিকায়। স্বর্ণপদক জেতেন ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, লং জাম্প এবং ৪০০ মিটার রিলেতে। যে কাজটি করেছিলেন
ওয়েন্স ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে।
১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকে লুইস ফের স্বর্ণপদক জেতেন ১০০
মিটার এবং লং জাম্পে। ২০০ মিটারে জেতেন রৌপ্যপদক। ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকে তিনি ৪০০ মিটার রিলে এবং লং জাম্পে স্বর্ণপদক
জেতেন। শেষ ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে ফের স্বর্ণ জেতেন লং জাম্পে। টানা ১৬ বছর
অলিম্পিকে এমন শাসন আর কেউ করতে পারেননি।
মার্ক স্পিজ : সাঁতারু (যুক্তরাষ্ট্র)
একটি অলিম্পিকে সর্বাধিক সাতটি স্বর্ণপদক জেতার
রেকর্ড এক সময় ছিল তারই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লিজেন্ড সাঁতারু মার্ক স্পিজ। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে
এমন দুর্দান্ত কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তিনি। তার সেই রেকর্ড শুধু ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকেই
ভাঙেন উত্তরসূরি মাইকেল ফেলপস। স্পিজ স্বর্ণপদক জিতেছিলেন ১০০ মিটার বাটারফ্লাই, ১০০ মিটার ফ্রিস্ট্রাইল, ২০০ মিটার বাটারফ্লাই,
২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলে, ৪০০ মিটার মিডলে রিলে এবং
৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে। তার আগে ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন স্পিজ। জিতেছিলেন দুটি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্য এবং একটি
ব্রোঞ্জপদক। তার এই রেকর্ড কেউ কখনও ভাঙতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহই ছিল। কারণ একটি অলিম্পিকে
এমন পারফরম্যান্স তার আগে কেউ কল্পনাও করেনি। তবে সেটাই ফেলপসকে
চ্যালেঞ্জ জুগিয়েছিল। যিনি নিজেও এখনও বলেন, স্পিজই সেরা।
জেসি ওয়েন্স : অ্যাথলেট (যুক্তরাষ্ট্র)
ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে একটি অলিম্পিকে চারটি
স্বর্ণপদক জিতে অমর হয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তিতুল্য অ্যাথলেট জেসি ওয়েন্স। ১৯৩৬ সাল। সারা বিশ্বে তখন
অস্থিরতা। অ্যাডলফ হিটলারের জার্মানি পৃথিবী শাসন করার স্বপ্ন দেখছে। ঠিক তখনই জার্মানির
রাজধানী বার্লিনে বসেছিল অলিম্পিক।
তাতে খোদ হিটলারের সামনেই কালো মানুষ জেসি ওয়েন্স চারটি
স্বর্ণপদক জেতেন ১০০ মিটার, ২০০ মিটার, লং জাম্প এবং ৪০০ মিটার রিলেতে।
একজন কালো অ্যাথলেটের এ কৃতিত্ব মোটেই সহ্য করতে পারেননি
একনায়ক হিটলার। বিজয়ীর মঞ্চে ওয়েন্সের সঙ্গে হাতই মেলাননি ইতিহাসের কুখ্যাত নায়ক। অথচ ওয়েন্স লং
জাম্পে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন জার্মানিরই আরেক প্রতিযোগী লুজ লংয়ের পরামর্শ এবং
টিপসে। লুজ পেয়েছিলেন রৌপ্য। দু’জনের বন্ধুত্ব আমৃত্যু বজায় ছিল। তবে দেশে ফিরেও
প্রাপ্য সম্মান পাননি ওয়েন্স। জীবনধারণের জন্য তাকে লড়াই-ই করতে হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন