বিশ্বকে চমকে দিতে চায় ব্রিটিশরা। এমন একটি সফল এবং
পরিচ্ছন্ন অলিম্পিক আয়োজন তারা করতে চায়, যেটা আদর্শ হয়ে
থাকবে পরবর্তী সময়ের জন্য। তাই মেধা, মনন এবং নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশরা। অলিম্পিক আয়োজনে পিছিয়ে
নেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিরাও।
তাদের যোগ্যতা দিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে
যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ বাঙালি।
তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন। এই রিপোর্টটি তৈরি করতে
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক জনমত এবং ঢাকার ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল
ম্যাগাজিন ক্যানভাস থেকে তথ্যসূত্র নেওয়া হয়েছে-
আকরাম খান
ব্রিটেনে বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই তরুণ
প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফার। শুধু বাঙালিদের মুখই উজ্জ্বল করেননি তিনি, তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এখন ব্রিটিশরাও তাকে নিয়ে গর্ব করছে। ২৭ জুলাই ইতিহাসের
অংশ হয়ে যাবেন আকরাম খান। জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চায় ব্রিটেন। আর এই বর্ণাঢ্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কোরিওগ্রাফার হচ্ছেন আকরাম খান। তার নির্দেশনাতেই প্রায় ১২
হাজার নৃত্যশিল্পী এবং কুশীলব পারফর্ম করবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। মূল থিমের সঙ্গে
সামঞ্জস্য বজায় রেখে বক্তব্যও উপস্থাপন করবেন তিনি। ব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয়
কোরিওগ্রাফারদের একজন আকরাম খান মাতৃভূমির সঙ্গেও সম্পৃক্ততা রেখে চলেন। গত বছর ঢাকাতে দেশ’ নামের একটি শোতে উপস্থাপনা করেছিলেন। সেবার দারুণ
প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। এখন ইউরোপের অনেক নামিদামি শোতে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন আকরাম। কিছু দিন আগে একটি
দুর্ঘটনায় পড়ে যান তিনি। মহড়ার সময় গুরুতর আহত হন। কিন্তু তারপরও দমে যাননি। সুন্দর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই
প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফার। তার সফলতা দেখার অপেক্ষায় লন্ডনে বসবাসরত বাঙালিরা।‘
আয়েশা কোরেশি এমবিই
লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনে তার ভূমিকা বিরাট মনে করা
হয়। তিনি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং অ্যাসোসিয়েট। তিনি অলিম্পিক বিড
জয়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার পেশাগত এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। তার রয়েছে বিবিসিতে
কাজ করার চমত্কার অভিজ্ঞতা। আর তার এই অভিজ্ঞতা বিড জিততে দারুণ অবদান রাখে। সেই অবদানের স্বীকৃতিও
পেয়েছেন আয়েশা কোরেশি। বিড জয়ের অবদানের জন্য তাকে দেওয়া হয়েছে এমবিই উপাধি। অলিম্পিক নিয়ে মাঠ পর্যায়ে
জনমত গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি এবং তা শেষ করেন সফলতার সঙ্গে। অলিম্পিক পার্কের
জন্য অনুমতি, লন্ডনজুড়ে ফোরাম গঠনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে
গেছেন আয়েশা এবং কাজ করেছেন লন্ডন বারার সঙ্গে যৌথভাবেও। সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক
অলিম্পিক কমিটির মিটিংয়ে তিনি কয়েকজন তরুণকে নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক কমিটির নেতৃত্ব
দেন। যেটা দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।
প্যারিসকে হারিয়ে লন্ডনকে ভেন্যু জয় করার পেছনে তার
নেতৃত্বে এই তরুণ দলটির দারুণ অবদান।
বিড জয়ের পর থেকেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সার্থক আয়োজন
সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। ব্রিটেনে তিনি বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
বুলবুল হুসাইন
আত্মবিশ্বাস এবং মনোবলের আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন
বুলবুল হুসাইন। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে লন্ডনের পুরো বাঙালি সমাজ। আয়েশা কোরেশির মতো তিনি
কোনো সংগঠক নন। একজন রাগবি খেলোয়াড়। তার আছে করুণ এক কাহিনী। লন্ডনে সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ড। কিন্তু তারপরও রাগবি
খেলাটা ছেড়ে দেননি তিনি। হুইল চেয়ারে বসেই চালিয়ে যান এ খেলাটা। আস্তে আস্তে ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলে সুযোগ
করে নেন তিনি। এখন দলটির অন্যতম সেরা সদস্য তিনি। ঘরে বসে না থেকে খেলাটা চালিয়ে যেমন নিজেকে সুস্থ
রেখেছেন, তেমনি সম্মানজনক স্থানও করে নিয়েছেন সবার মধ্যে। রাগবি এখন তার
ধ্যান-জ্ঞান। রাগবি ছাড়া কিছুই বোঝেন না বুলবুল। খেলাটা যেন রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে তার। নিজের নৈপুণ্য তাই
ওপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৮ সালে প্যারা অলিম্পিকে মেডেল জয়ে ব্যর্থ হলেও দমে যাননি তিনি। ২০১০ সালের বিশ্ব
রাগবি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অসাধারণ খেলেছিলেন। দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিল
তার নৈপুণ্য। এবার তার লক্ষ্য অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা। লন্ডনের মাটিতে এবার পদক জেতাই তার স্বপ্ন।
নাহিমুল ইসলাম
অলিম্পিক মশাল বহন করার মতো গৌরবজনক অধ্যায়ের
সঙ্গে নাম লেখাতে যাচ্ছেন দুই বাঙালি। ২১ জুলাই বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট
প্রদক্ষিণ করবে অলিম্পিক মশাল। আয়োজক কমিটি মশাল বহনকারী মর্যাদাবানদের নাম ঘোষণা করেছে। এতে এই অঞ্চলে মোট ১৪ জন
মশাল বহন করবেন। আর এই ১৪ জনের মধ্যে আছেন দুজন বাঙালিও। এদের একজন নাহিমুল
ইসলাম। তার বয়স ১৭ বছর। তিনি লা সোয়াপের সিক্স ফরমের ছাত্র। আর সত্তর হাজার আবেদনকারীকে ডিঙিয়ে মাশাল বহন
করার সুযোগ লাভ করেন আবুল কাশেম।
তিনি পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল প্রাইমারি স্কুলের একজন
গভর্নর।’
২১ জুলাই মশালসহ শোভাযাত্রা পূর্ব লন্ডনের
অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আসবে। অলিম্পিক মশাল হাতে কমিউনিটি ও সেলিব্রেটিদের এই শোভাযাত্রা হাই স্ট্রিট ২০১২
নামে প্রজেক্টির সঙ্গে অলিম্পিক পার্কের প্রধান সড়ক অতিক্রম করবে। এরপর মশালটি নিয়ে যাওয়া হবে নিউহ্যামে। সেখান থেকে আবার
শোভাযাত্রা শুরু হবে।
অলিম্পিকের মশাল বহন দারুণ গৌরবের। আর সেই গৌরবের
অধিকারী হচ্ছেন দুই বাঙালি আবুল কাশেম ও নাইমুল ইসলাম।
সায়মান মিয়া
তরুণ স্থপতি। কাজ দিয়ে লন্ডনে বাঙালিদের
মুখ যারা উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন তাদের একজন হচ্ছেন সায়মান মিয়া। তিনি লন্ডনের বার্মিংহাম
স্কুল অব আর্কিটেকচারের মাস্টার্সের ছাত্র। ছাত্র হিসেবে দারুণ প্রতিভার অধিকারী। লন্ডন অলিম্পিক
উপলক্ষে পাঁচ পাউন্ডের স্মারক মুদ্রার ডিজাইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চমক দেখান
তিনি। কয়েক দিন আগে তার ডিজাইন করা মুদ্রা প্রকাশ করা হয়েছে। ডিজাইন করা মুদ্রা সব
মহলের দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সায়মানের মুদ্রার ডিজাইন এ ধরনের-মাঝখানে লন্ডন নগরীর স্কাইলাইন এবং চারদিকে
বিভিন্ন খেলোয়াড়ের ছবি। দারুণ এক নকশা বিচারকদের বেশ আকৃষ্ট করে।
অলিম্পিক মুদ্রা ডিজাইন করার জন্য পুরস্কার
হিসেবে তিনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ডলার। কিন্তু অর্থের চেয়ে বড় ব্যাপার হল একজন বাঙালির
নাম ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বে। তিনি চেষ্টা করেছেন ব্রিটিশ ঐতিহ্যকে বজায় রেখে একটি ক্লাসিক ডিজাইন করার আর
তাতে পুরোপুরি সফল মনে করা হচ্ছে তাকে। লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডমার্ক সেন্টপলস,
বিগবেন ঘড়ি ইত্যাদির সঙ্গে স্কাইলাইন আর খেলোয়াড়দের নতুন
এবং পুরনোর দারুণ এক সম্মিলন ঘটাতে পেরেছেন সায়মান মিয়া।
সংবাদ: সংগ্রহ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন