পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

লন্ডন অলিম্পিকে অনন্য পাঁচ বাঙালি


বিশ্বকে চমকে দিতে চায় ব্রিটিশরাএমন একটি সফল এবং পরিচ্ছন্ন অলিম্পিক আয়োজন তারা করতে চায়, যেটা আদর্শ হয়ে থাকবে পরবর্তী সময়ের জন্যতাই  মেধা, মনন এবং নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশরাঅলিম্পিক আয়োজনে পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিরাওতাদের যোগ্যতা দিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ বাঙালিতাদের নিয়েই আজকের আয়োজনএই রিপোর্টটি তৈরি করতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা সাপ্তাহিক জনমত এবং ঢাকার ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন ক্যানভাস থেকে তথ্যসূত্র নেওয়া হয়েছে-

আকরাম খান
ব্রিটেনে বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এই তরুণ প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফারশুধু বাঙালিদের মুখই উজ্জ্বল করেননি তিনি, তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বেএখন ব্রিটিশরাও তাকে নিয়ে গর্ব করছে২৭ জুলাই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন আকরাম খানজমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চায় ব্রিটেনআর এই বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কোরিওগ্রাফার হচ্ছেন আকরাম খানতার নির্দেশনাতেই প্রায় ১২ হাজার নৃত্যশিল্পী এবং কুশীলব পারফর্ম করবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেমূল থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে বক্তব্যও উপস্থাপন করবেন তিনিব্রিটেনের শীর্ষস্থানীয় কোরিওগ্রাফারদের একজন আকরাম খান মাতৃভূমির সঙ্গেও সম্পৃক্ততা রেখে চলেনগত বছর ঢাকাতে দেশনামের একটি শোতে উপস্থাপনা করেছিলেনসেবার দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনিএখন ইউরোপের অনেক নামিদামি শোতে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন আকরামকিছু দিন আগে একটি দুর্ঘটনায় পড়ে যান তিনিমহড়ার সময় গুরুতর আহত হনকিন্তু তারপরও দমে যাননিসুন্দর একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই প্রতিভাবান কোরিওগ্রাফারতার সফলতা দেখার অপেক্ষায় লন্ডনে বসবাসরত বাঙালিরা
আয়েশা কোরেশি এমবিই
লন্ডন অলিম্পিক আয়োজনে তার ভূমিকা বিরাট মনে করা হয়তিনি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং অ্যাসোসিয়েটতিনি অলিম্পিক বিড জয়ে অসামান্য অবদান রেখেছেনতার পেশাগত এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবেতার রয়েছে বিবিসিতে কাজ করার চমত্কার অভিজ্ঞতাআর তার এই অভিজ্ঞতা বিড জিততে দারুণ অবদান রাখেসেই অবদানের স্বীকৃতিও পেয়েছেন আয়েশা কোরেশিবিড জয়ের অবদানের জন্য তাকে দেওয়া হয়েছে এমবিই উপাধিঅলিম্পিক নিয়ে মাঠ পর্যায়ে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি এবং তা শেষ করেন সফলতার সঙ্গেঅলিম্পিক পার্কের জন্য অনুমতি, লন্ডনজুড়ে ফোরাম গঠনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন আয়েশা এবং কাজ করেছেন লন্ডন বারার সঙ্গে যৌথভাবেওসিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মিটিংয়ে তিনি কয়েকজন তরুণকে নিয়ে লন্ডন অলিম্পিক কমিটির নেতৃত্ব দেনযেটা দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছিলপ্যারিসকে হারিয়ে লন্ডনকে ভেন্যু জয় করার পেছনে তার নেতৃত্বে এই তরুণ দলটির দারুণ অবদানবিড জয়ের পর থেকেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সার্থক আয়োজন সম্পন্ন করার লক্ষ্যেব্রিটেনে তিনি বাঙালিদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন
বুলবুল হুসাইন
আত্মবিশ্বাস এবং মনোবলের আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন বুলবুল হুসাইনতাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে লন্ডনের পুরো বাঙালি সমাজআয়েশা কোরেশির মতো তিনি কোনো সংগঠক ননএকজন রাগবি খেলোয়াড়তার আছে করুণ এক কাহিনীলন্ডনে সড়ক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় তার মেরুদণ্ডকিন্তু তারপরও রাগবি খেলাটা ছেড়ে দেননি তিনিহুইল চেয়ারে বসেই চালিয়ে যান এ খেলাটাআস্তে আস্তে ব্রিটিশ হুইল চেয়ার রাগবি দলে সুযোগ করে নেন তিনিএখন দলটির অন্যতম সেরা সদস্য তিনিঘরে বসে না থেকে খেলাটা চালিয়ে যেমন নিজেকে সুস্থ রেখেছেন, তেমনি সম্মানজনক স্থানও করে নিয়েছেন সবার মধ্যেরাগবি এখন তার ধ্যান-জ্ঞানরাগবি ছাড়া কিছুই বোঝেন না বুলবুলখেলাটা যেন রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে তারনিজের নৈপুণ্য তাই ওপরের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি২০০৮ সালে প্যারা অলিম্পিকে মেডেল জয়ে ব্যর্থ হলেও দমে যাননি তিনি২০১০ সালের বিশ্ব রাগবি চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি অসাধারণ খেলেছিলেনদারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছিল তার নৈপুণ্যএবার তার লক্ষ্য অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতালন্ডনের মাটিতে এবার পদক জেতাই তার স্বপ্ন
নাহিমুল ইসলাম
অলিম্পিক মশাল বহন করার মতো গৌরবজনক অধ্যায়ের সঙ্গে নাম লেখাতে যাচ্ছেন দুই বাঙালি২১ জুলাই বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেট প্রদক্ষিণ করবে অলিম্পিক মশালআয়োজক কমিটি মশাল বহনকারী মর্যাদাবানদের নাম ঘোষণা করেছেএতে এই অঞ্চলে মোট ১৪ জন মশাল বহন করবেনআর এই ১৪ জনের মধ্যে আছেন দুজন বাঙালিওএদের একজন নাহিমুল ইসলামতার বয়স ১৭ বছরতিনি লা সোয়াপের সিক্স ফরমের ছাত্রআর সত্তর হাজার আবেদনকারীকে ডিঙিয়ে মাশাল বহন করার সুযোগ লাভ করেন আবুল কাশেমতিনি পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল প্রাইমারি স্কুলের একজন গভর্নর
২১ জুলাই মশালসহ শোভাযাত্রা পূর্ব লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আসবেঅলিম্পিক মশাল হাতে কমিউনিটি ও সেলিব্রেটিদের এই শোভাযাত্রা হাই স্ট্রিট ২০১২ নামে প্রজেক্টির সঙ্গে অলিম্পিক পার্কের প্রধান সড়ক অতিক্রম করবে।  এরপর  মশালটি নিয়ে যাওয়া হবে নিউহ্যামেসেখান থেকে আবার শোভাযাত্রা শুরু হবে
অলিম্পিকের মশাল বহন দারুণ গৌরবেরআর সেই গৌরবের অধিকারী হচ্ছেন দুই বাঙালি আবুল কাশেম ও নাইমুল ইসলাম
সায়মান মিয়া
তরুণ স্থপতিকাজ দিয়ে লন্ডনে বাঙালিদের মুখ যারা উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন তাদের একজন হচ্ছেন সায়মান মিয়াতিনি লন্ডনের বার্মিংহাম স্কুল অব আর্কিটেকচারের মাস্টার্সের ছাত্রছাত্র হিসেবে দারুণ প্রতিভার অধিকারীলন্ডন অলিম্পিক উপলক্ষে পাঁচ পাউন্ডের স্মারক মুদ্রার ডিজাইন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চমক দেখান তিনিকয়েক দিন আগে তার ডিজাইন করা মুদ্রা প্রকাশ করা হয়েছেডিজাইন করা মুদ্রা সব মহলের দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছেসায়মানের মুদ্রার ডিজাইন এ ধরনের-মাঝখানে লন্ডন নগরীর স্কাইলাইন এবং চারদিকে বিভিন্ন খেলোয়াড়ের ছবিদারুণ এক নকশা বিচারকদের বেশ আকৃষ্ট করে
অলিম্পিক মুদ্রা ডিজাইন করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন পাঁচ হাজার ডলারকিন্তু অর্থের চেয়ে বড় ব্যাপার হল একজন বাঙালির নাম ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বেতিনি চেষ্টা করেছেন ব্রিটিশ ঐতিহ্যকে বজায় রেখে একটি ক্লাসিক ডিজাইন করার আর তাতে পুরোপুরি সফল মনে করা হচ্ছে তাকেলন্ডনের ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডমার্ক সেন্টপলস, বিগবেন ঘড়ি ইত্যাদির সঙ্গে স্কাইলাইন আর খেলোয়াড়দের নতুন এবং পুরনোর দারুণ এক সম্মিলন ঘটাতে পেরেছেন সায়মান মিয়া
সংবাদ: সংগ্রহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন